নারায়ণগঞ্জ মেইল: করোনার কারণে দীর্ঘ চার মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। ঈদের পরে শর্ত সাপেক্ষে ধীরে ধীরে এখানকার হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়া হবে। এতে লাখো পর্যটকের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে সৈকতের এই শহর। ২৬ জুলাই রবিবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের ডিসি মো. কামাল হোসেন। কক্সবাজারের পর্যটন বন্ধ থাকায় এ খাতে প্রায় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের অন্যান্য খাতের মতো পর্যটন খাতের ওপরও প্রভাব ফেলেছে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস। চার মাস ধরে কক্সবাজারের ৪৭০টি হোটেল-মোটেল, দুই হাজারের বেশি খাবারের দোকান, বার্মিজ মার্কেটসহ পর্যটন নির্ভর পাঁচ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে আবাসিক হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁর প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দেড় শতাধিক ট্যুর অপারেটরসহ দেড় লক্ষাধিক মানুষ।
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানান, গত চার মাস পর্যটকশূন্য হয়ে আছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। সেই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ঈদের পরে খুলে না দিলে সামনে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে কাশেম বলেন, মহামারি পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে। চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
দেশে প্রথমবারের মতো করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পর দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর দিনে কক্সবাজারে পর্যটক আগমন বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে জনশূন্য এলাকায় পরিণত হয় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ থাকায় চার মাস আয়-রোজগার শূন্যের কোটায়। কোটি কোটি টাকার আবাসন প্রতিষ্ঠান নিয়ে চরম বেকায়দায় রয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, জেলার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে করোনাভাইরাস। পর্যটনের সঙ্গে বার্মিজ, ঝিনুক, রেস্তোরাঁ, শুকনো খাবার, পান-সিগারেটসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় অর্ধশত ক্ষুদ্র ব্যবসা ও নানা ধরনের পরিবহন যুক্ত। এসব ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ব্যবসা বন্ধ থাকায় এসব মানুষ বেকার হয়েছেন।
সমুদ্র পাড়ের হোটেল কল্লোলের মালিক মো. আশরাফ বলেন, হোটেল কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ছাড়াও বিদ্যুৎ বিল ও আনুষঙ্গিক খরচ লাখ টাকার মতো। ব্যবসা বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চার মাস ভাড়া ও অন্য ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ধারদেনায় পড়তে হয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘ চার মাস পর্যটন ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে চরম দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছেন। করোনার কারণে এসব ব্যবসা চার মাসেরও অধিক সময় বন্ধ। ফলে তাদের ব্যবসার মূলধন খাওয়া শেষ।
কক্সবাজারের ডিসি মো. কামাল হোসেন বলেন, ঈদুল আজহার পর কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য কঠিন শর্ত সাপেক্ষে খুলে দেয়া হবে। আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁসহ পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট যেসব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত করোনা সংক্রমণ রোধ ব্যবস্থা থাকবে এবং স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলবে শুধু সেসব প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেয়া হবে।