রূপগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এতে তিনজনের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেলেও এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।
শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ডেমরা, কাঞ্চনসহ ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জ জেলার উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানান, আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল ভোরের দিকে, সকালে আবারো বেড়ে যায় আগুন। আমরা কাজ করছি।
৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে, ভেতরে অনেকেই আটকা ছিলেন যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তারা বের হতে পেরেছেন কিনা বা তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে এখনি বলা যাচ্ছেনা। হতাহতের সংখ্যা আরো অনেক বাড়তে পারে।
নিহতরা হলেন- সিলেট জেলার জ্যোতি সরকারের স্ত্রী স্বপ্না রানী (৪৫), দিনাজপুরের চিনিরবন্দর উপজেলার আনিসুর রহমানের ছেলে মোরসালিন (২৮) ও উপজেলার গোলাকান্দাইল নতুন বাজার এলাকার হারুন মিয়ার স্ত্রী মিনা আক্তার (৩৩)। আহতদের স্থানীয় ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তবে এখনো ভেতরে শতাধিক শ্রমিক আটকে আছেন বলে জানান শ্রমিকরা। তাদের উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্ণগোপ এলাকায় সেজান জুস কারখানায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সাত তলা ভবনে থাকা কারখানাটির নিচ তলার একটি ফ্লোরের কার্টন থেকে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এক পর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কালো ধোয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করে। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে শুরু করেন। এ সময় ঘটনাস্থলেই স্বপ্না ও মিনা নামে দুই নারী নিহত হন। পরে মোরসালিন লাফ দিয়ে আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইউএস বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন এবং মোরসালিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া। এছাড়া গুরুতর আহত বাকিদের অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী নিহত স্বপ্না রানীর মেয়ে শ্রমিক বিশাখা রানী গণমাধ্যমকে বলেন, অনেক শ্রমিক কারখানার ভেতরে আটকা রয়েছেন। তাদের বের করা না হলে সবাই মারা যাবেন।
আব্দুল আল আরেফিন আরো বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। পুরোটাই পুড়ে গেছে কারখানার, আগুনের সূত্রপাত নিশ্চিত নয়, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক। তবে লকডাউনে এতো শ্রমিক কেন ভেতরে ছিল বা তারা আগুনের পর আটকে কেন পড়লো এ নিয়ে আগুন নেভার পর তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।