নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার ৬টি মৌজার কৃষিজমি, নীচুভূমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ বিশেষের ১৮৬৮ বিঘা জমিতে সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি ও সোনারগাঁও ইকোনোমিক জোন কর্তৃক মাটি ভরাটকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজীক আল জলিল-এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রদান করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার চুড়ান্ত শুনানী শেষে আদালত এ রায় প্রদান করেন। আদালতে বেলা’র পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ফিদা এম কামাল, এ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান ও সাঈদ আহমেদ কবীর।
অপরদিকে দুই কোম্পানীর পক্ষে ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত এটর্নী জেনারেল মুরাদ রেজা, এ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। এছাড়া, আদালত শিল্পপতি মো. নুর আলীর মালিকানাধীন এই দুটি প্রতিষ্ঠানসহ ওই এলাকায় আর যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষি, নদীর জলাভূমি ও নীচু ভূমি ভরাট করেছে তাদের মাটি সরিয়ে ৬ মাসের মধ্যে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ধার্য করে তা মাটি ভরাটকারীর কাছ থেকে আদায় করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর জানান, নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার ৬টি মৌজার (পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবান্ধা এবং রতনপুর) কৃষিজমি, জলাভূমি ও মেঘনা নদীর অংশ ভরাট করে ‘সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি’ এবং ‘সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন’ নির্মাণ কার্যক্রমকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
নথি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবন্ধ এবং রতনপুর মৌজার কৃষিজমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ বিশেষে জোরপূর্বক মাটি ভরাট করে ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লি: কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি প্রকল্পের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণার জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রীট পিটিশন দায়ের করে। রীট পিটিশনের প্রাথমিক শুনানীতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লি: কে প্রকল্প এলাকার মাটি/বালি ভরাট কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন।
একইসঙ্গে ভরাটকৃত ভূমি হতে মাটি/বালি অপসারণের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করে ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লি: এর সহযোগী কোম্পানী ইউনিক হোটেল এন্ড রিসোর্ট লি: উল্লেখিত ছয়টি মৌজায় তথাকথিত সোনারগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য মাটি ভরাটের অনুমতি পেয়েছে দাবি করে । সেই প্রেক্ষিতে আদালতের ২ মার্চ, ২০১৪ তারিখের প্রদত্ত আদেশ অকার্যকর ঘোষণার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের অবকাশকালীন বেঞ্চে আবেদন করে।
২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর আদেশ সংশোধনক্রমে সোনারগাঁও ইকোনমিক জোনের জন্য মাটি ভরাট কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ দেন। উক্ত আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে বেলা আপীল বিভাগে সিভিল মিসসেলেনিয়াস পিটিশন দাখিল করে। এরপর আপীল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করেন। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের আদেশ ভঙ্গ করে মো: নূর আলী সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন-এর নামে মাটি ভরাট অব্যাহত রাখলে বেলা আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে। আদেশ প্রতিপালন হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন চান আদালত।
জেলা প্রশাসক ওই বছরের ৮ নভেম্বর আপিল বিভাগে হাজির হয়ে জানান, সংশ্লিস্ট এলাকায় মাটি ভরাট কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তার বক্তব্যের সমর্থনে তিনি কিছু ছবি দেখান। এ প্রেক্ষাপটে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর আপিল বিভাগ বিষয়টি হাইকোর্টে দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় হাইকোর্টে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দেয়া হলো আজ বুধবার।