নতুন সীমানা বিন্যাস, মান্নানের সর্বনাশ

নারায়ণগঞ্জ মেইল: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ৩০০ টি নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্ববিন্যাসের ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এবং সোনারগাঁও উপজেলা মিলে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন গঠিত হয়েছে। আর এই ঘোষণার সাথে সাথে মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়ে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের। সোনারগাঁয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন এই রাজনীতিবিদ কিন্তু নতুন নিয়মে সিদ্ধিরগঞ্জ সোনারগাঁওয়ের সাথে যোগ হওয়ায় মান্নানের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কমে এসেছে। কারণ এই আসনে প্রভাবশালী বিএনপি নেতা সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন মান্নানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দেখা দিয়েছেন। গিয়াসউদ্দিনকে টপকে মনোনয়ন ছিনিয়ে আনা মান্নানের জন্য অসম্ভব প্রায়। তাই নতুন সীমানা বিন্যাস যেনো মান্নানের জন্য সর্বনাশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত সময়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। কিন্তু এর পাশাপাশি সোনারগাঁওয়ে একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য কমিটি করার সময় বিরোধী মতকে পুরোপুরি মাইনাস করে দিয়েছেন। তাছাড়া তার ছেলে জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম সজীব এবং পিএস সেলিম হোসেন দিপুর লাগামহীন অন্যায় অনিয়মকে প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন মান্নান।

সূত্র জানায়, যোগ্য আর ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, ৫ আগস্টের পর সীমাহীন চাঁদাবাজি আর দখলদারিত্ব, কর্মচারী আর চাকর বাকর শ্রেণীর লোকদের দিয়ে কমিটি সাজানো, দলের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার আর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মান্নান ও তার ছেলে সজীবের গড়ে তোলা সাম্রাজ্য আজ হুমকির মুখে। তাছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় বাপ-বেটা ও তাদের পিএস সেলিমের সীমাহীন বাণিজ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সোনারগাঁযর সাধারণ মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে এসে ঠেকেছে। সেই সাথে গিয়াসউদ্দিনের মত হেভিওয়েট নেতা সোনারগাঁয়ে দৃষ্টি ফেরানোতে মান্নান ও তার পুত্র সজীব চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

সূত্র মতে, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানকে সবচেয়ে বেশি ডুবিয়েছেন তার পিএস সেলিম। পুরো সোনারগাঁ জুড়ে এই পিএস সেলিম এখন সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে এক মূর্তিমান আতংকের নাম। আর এই বদনামের কাঁটা এসে বিঁধছে মান্নান ও তার ছেলে সজিবের গায়ে। মান্নান ও সজীবের আস্থাভাজন এই পিএস সেলিম এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, কারো কোন কথাই সে এখন গায়ে মাখছে না। আর এই পিএস সেলিমকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দানের খেসারত হিসেবে সোনারগাঁ থেকে মান্নানের ধানের শীষের মনোনয়ন ঝুলে গেছে বলে মনে করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র বলছে, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন তার পিএস নামে পরিচিত সেলিম হোসেন দিপুর উপর। আর এই সুযোগে পিএস সেলিম নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় মান্নানের রাজনৈতিক অবস্থানকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন। মান্নান ও তার পুত্র সজীবের নাম ভাঙ্গিয়ে পুরো সোনারগাঁ জুড়ে রাম রাজত্ব কায়েম করেন এই সেলিম হোসেন দিপু। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সাথে মান্নানের দূরত্ব তৈরি করেন এবং বিভিন্ন নেতাকর্মীদের একজনের সাথে আরেকজনের ঝগড়া লাগিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেন। পিএস সেলিমের কারণে দীর্ঘদিনের রাজপথের পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা মান্নান বলয় ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছেন। শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক চাটুকার আর চাকর বাকর শ্রেণীর লোকজনদেরকে মান্নানের চারপাশে রেখে কৌশলে বাকিদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন এই পিএস সেলিম। যার ফলে চরম দুরবস্থায় পড়তে যাচ্ছেন সোনারগাঁ থেকে এমপি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকা আজহারুল ইসলাম মান্নান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ