নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, আমরা দীর্ঘ ১৬ বছর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। এই আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় এসেছে ৫ আগস্ট। এই বিজয় এমনি এমনি আসেনি, গত ১৬ বছর খুনি হাসিনার জুলুম নির্যাতন সহ্য করার পর এই বিজয় এসেছে। এ খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। পালিয়ে যাওয়ার আগে দুর্নীতি আর লুটপাট করে এদেশের প্রত্যেকটি সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। সেই সাথে ধ্বংস করেছে দেশের গণতন্ত্রকে আর আইনের শাসনকে। কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে এদেশের অর্থনীতিতে পঙ্গু করে দিয়েছে। দেশের মানুষ ১৫ বছর যাবত ভোট দিতে পারে না। মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার টুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে।
এখন হাসিনা সরকারের সকল অপকর্মের বিচার করতে হবে এবং দেশকে পুনর্গঠন করতে হবে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সে লক্ষ্যে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ। দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে ঠিক করবেন আগামীতে কারা দেশ পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দেবে। এই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছিল কিন্তু বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর সকল ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে গেছে। দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশায় আছে।
সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রবিবার (২২ জুন) বিকেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, এখন আমাদেরকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্বাচনের সবচেয়ে মূল্যবান হচ্ছে ভোটার। প্রত্যেকটা ভোটারের সমান মূল্য তাই আমাদেরকে ভোটারদের কাছে যেতে হবে এবং তাদেরকে বুঝাতে হবে বিএনপি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দল। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করেছে বিএনপি। সেই সাথে দলের সাংগঠনিক শক্তিও বৃদ্ধি করতে হবে। সে লক্ষ্যে বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আপনারা যারা আগে বিএনপির সদস্য ছিলেন তারা নবায়ন করবেন আর আগে যারা সদস্য ছিলেন না কিন্তু বিএনপির আদর্শে বিশ্বাস করেন তারা সদস্যপদ গ্রহণ করবেন। সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিও এই কর্মসূচি পালন করছে।
তিনি বলেন, এখানে এসে একটা কথা শুনলাম, সদস্য পদ নবায়ন এবং নতুন সদস্য হওয়ার বিষয়ে বাধা প্রদান করা হচ্ছে এবং হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। এটা আসলে ঠিক না। বিএনপির দেশের বৃহত্তম রাজনীতির দল। এই দলে নতুন সদস্য আসবে, বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী মানুষদেরকে বিএনপিতে আনাটা আপনার আমার দায়িত্ব। এখানে কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। তাছাড়া যারা নবায়ন করবেন তারা তো সবাই বিগত আন্দোলন সংগ্রামের পরীক্ষিত মুখ। আমি সব মুখগুলোকে চিনি, সবাই আমার সাথে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। তাহলে আপনারা কেনো বিএনপির সদস্য পদ নবায়ন করতে পারবেন না। আপনারা সবাই অবশ্যই সদস্যপদ নবায়ন করবেন, কেউ আটকে রাখতে পারবে না। আপনাদেরকে সদস্য করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমি জেলা বিএনপিতে আছি আবার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতেও আছি, আমি সব ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, সোনারগাঁয়ের যারা ভালো মানুষ কোনদিন অন্যায় অপরাধ করেননি তাদেরকে বিএনপিতে নিতে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই নির্দেশনা দিয়েছেন। কেউ যদি বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে বিএনপির গঠনতন্ত্র মেনে এই দলে আসতে চায় তাহলে তাকে স্বাগত জানাতে হবে।
এই সোনারগাঁয়ের প্রতি আমার একটা বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে কারণ যখন সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ একই নির্বাচনী আসন গঠিত হয়েছিলো তখন নেতাকর্মীরা আমাকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের প্রতিটি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে জনসংযোগ করেছেন। সেই থেকে সোনারগাঁয়ের সাথে আমার একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। তাছাড়া আমরা তো এই নারায়ণগঞ্জেরই এই সন্তান, আমরা তো বরিশাল, নোয়াখালী, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ থেকে আসিনি। এই নারায়ণগঞ্জ জেলা পাঁচটি সংসদীয় আসনে বিভক্ত। আমাদেরকে এই পাঁচটি আসনে রাজনীতি করতে হবে। এই পাঁচটি আসনে দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। এ নিয়ে যারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায় তাদের মন অনেক ছোট। এত ছোট মন নিয়ে বড় কিছু পাওয়া যায় না। ওই উপজেলা চেয়ারম্যান বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়া যায় কিন্তু সংসদ সদস্য হতে হলে বড় মন লাগে।
সোনারগাঁ বাসীকে উদ্দেশ্যে করে গিয়াস উদ্দিন বলেন, সোনারগাঁ শুধু নারায়ণগঞ্জ না সারা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হবে এবং এর সুনাম বৃদ্ধি করতে হবে। আমি সোনারগাঁয়ের যারা সম্মানী ব্যক্তি আছেন যেমন সাবেক এমপি রেজাউল করিম সাহেব, খন্দকার আবু জাফর সাহেব এবং আপেল সাহেবদের মত সুধীজনদের সাথে বসে কথা বলে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবো। আলোচনা করে কাজ করলে সফলতা আসে। আমরা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সাথেও কথা বলবো। পৌরসভা বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সাথেও কথা বলবো। সবাই মিলে মিশে একসাথে দলের জন্য কাজ করব।
আমি ফতুল্লা সিদ্ধিসগঞ্জে রাজনীতি করছি দীর্ঘদিন। সেখানে বরিশালের লোক এসে নেতৃত্ব দেয়, নোয়াখালীর লোক, কুমিল্লার লোক, পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জের লোক এসে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা তাদেরকে মেনে নিয়েছি, তাদেরকে মেনে নিয়ে তাদের সাথে নিয়েই রাজনীতি করছি। আমাদের মনে রাখতে হবে বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। এটাই দলের সৌন্দর্য। সেই সাথে সংসদ নির্বাচনে একটি আসন থেকে একাধিক জন মনোনয়ন চাইতেই পারে বরং কোনো আসন থেকে একজন মনোনয়ন চাওয়াটা বিএনপির সাথে মানায় না। আমরা চাইতে পারি কিন্তু দেওয়ার মালিক আল্লাহ। আমাদেরকে আল্লাহর উপরই নির্ভর করতে হবে। তাহলে কেনো আমরা একে অপরকে দুশমন ভাববো। কেন একজন আরেকজনকে কটাক্ষ করে কথা বলবো। আমাদের কথা বলায় শালীনতা থাকতে হবে, মার্জিত ভাব থাকতে হবে, বিনয় থাকতে হবে, একে অপরকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে। প্রতিটা কর্মীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। যে নেতাকর্মীকে অসম্মান করে কথা বলে সে আমার দুশমন। কারণ কর্মী ছাড়া নেতার কোন দাম নাই। সোনারগাঁয়ের প্রতিটি কর্মীকে মূল্যায়ন করতে হবে, সম্মান দিতে হবে। সেইসাথে আমি বলতে চাই আপনারা আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন ইনশাআল্লাহ আপনারা এর বেনিফিট পাবেন। সোনারগাঁয়ের প্রতিটি নেতাকর্মীকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম প্রধানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুকুল, সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের আহবায়ক সহিদুর রহমান স্বপন, সোনারগাঁও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব নাসিরউদ্দিন, সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আমির হোসেন, সম্মানী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি রমজান সরকার, সোনারগাঁ থানা কৃষক দলের সাবেক সদস্য সচিব বাবুল হোসেন, সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম মোল্লা, সাদীপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সাবেক সভাপতি শাহ আলম সহ নেতৃবৃন্দ।
