নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সোনারগাঁ উপজেলার রাজনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক কমিটির নেতাদের পিছনে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে নিজের পছন্দমতো লোক দিয়ে কমিটি এনেছিলেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। নিজ দলেরই ত্যাগী ও বিপ্লবী নেতাদের মাইনাস করে নিজের আজ্ঞাবহদের দিয়ে কমিটি সাজিয়েছিলেন মান্নান। আশা ছিলো মাইনাস ফর্মূলা কার্যকর করে ছেলেকে নিয়ে মনের আনন্দে সোনারগাঁয়ে রাজনীতি করবেন। কিন্তু মান্নানের সেই স্বপ্ন ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির আলাদা ব্রানাওে কর্মসূচি পালন করছেন ত্রাগী ও বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। এতে করে মিটিং মিছিলে লোক পাচ্ছেন না তিনি। বাধ্য হয়ে ছেলেকে দিয়ে বিভিন্ন মিল কারখানা থেকে টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করে আনতে হচ্ছে। তাছাড়া জেলা বিএনপির যে নেতাদের টাকা দিয়ে কমিটি এনেছিলেন তারাও আার নেই দৃশ্যপটে। ফলে সোনারগাঁয়ে ক্রমেই কোয়দায় পরে যাচ্ছে বাপ-বেটার রাজনীতি।
সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ বিএনপি’র অলিখিত নিয়ন্ত্রক হতে চেয়েছিলেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। যদিও একসময় সোনারগাঁ বিএনপিকে শাসন করতেন সাবেক মন্ত্রী রেজাউল করিম ও এরপরে সাবেক উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সংস্কারপন্থী হিসেবে রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেছেন দুর্দান্ত প্রতাপশালী রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী ও এমপি রেজাউল করিম। আর দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনীতি থেকে দূরে আছেন আবু জাফর। এই সুযোগে সোনারগাঁ বিএনপির চূড়ায় উঠে বসতে চাইছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান।
সূত্র মতে, বিগত কয়েক বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। তাছাড়া সোনারগাঁ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের খোঁজখবরও নিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক হামলা-মামলা-নির্যাতনে দিশেহারা নেতাকর্মীদের মামলার খরচ এবং পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
শেষ কয়েক বছরে এতকিছু করার কারণে সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মান্নান। এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র কর্ণধার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন তিনি এবং সেই লক্ষ্যে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বাজেট নিয়ে নেমে পড়েন থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিজের হস্তগত করতে। ইতিমধ্যে নিজের পছন্দ মতন লোকদের দিয়ে কমিটি অনুমোদনও করিয়ে ফেলেছেন। তবে মান্নানের এই কমিটিতে বেশ কয়েকজন বিতর্কিত নেতা স্থান পেয়েছেন, যা নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সদস্য সচিব করা হয়েছে যাকে সেই মোশারফ হোসেনকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই সোনারগাঁয়ে।
স্থানীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, বিগত সময়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনাকারী বিতর্কিত বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেনকে সোনারগাঁ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। গত ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এ সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে কোনদিন দেখা মিলেনি মোশারফের। তাছাড়া পুলিশের মামলা হামলায়ও নাম নেই এই বিএনপি নেতার। মূলত সরকারি দলের সাথে আঁতাত করে চলায় সকল কিছু থেকে নিরাপদে থেকেছেন তিনি। আর এরকম একজন সুবিধাবাদী নেতাকে সোনারগাঁ বিএনপির নেতৃত্বে নিয়ে আসায় মান্নানের প্রতি ক্ষুব্ধ সোনারগাঁ বিএনপি’র তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
এদিকে বিতর্কিতদের জায়গা করে দিতে সোনারগাঁ বিএনপির ত্যাগী নেতাদের মাইনাস করে দিয়েছেন মান্নান। আর এই মাইনাস ফর্মূলাই তার জন্যে বুমেরাং হিসেবে দেখা দিয়েছে। উপজেলা বিএনপির পূর্নাঙ্গ কমিটি থাকার পরেও আলাদা ব্যানারে কমৃসূচি পাালিত হচ্ছে নিয়মিত। তাছাড়া মান্নানের মিছিলের চাইতে বঞ্চিতদের মিছিলের লোকও হচ্ছে বেশী। যার ফলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই এখন দুরুহ হয়ে পরেছে বাপ-বেটার জন্যে। তাছাড়া মান্নান বলয়ের অনেক শীর্ষ নেতাও বঞ্চিতদের সাথে যোগ দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। ফলে মান্নানের এতোদিনের সাজানো বাগান এখন হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে বসেছে।