আমি প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না: গিয়াসউদ্দিন

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, বিগত ১৬ বছরে খুনি আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশে অসংখ্য গডফাদার সৃষ্টি করেছেন। সবচেয়ে বড় গডফাদার ছিলো নারায়ণগঞ্জে। এই শিমড়াইলেও একজন কুখ্যাত গডফাদার ছিলো যার নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জের কলঙ্কজনক ৭ খুন সংগঠিত হয়েছিলো।  অশ্লীল নৃত্য, মাদক আর জুয়ার আস্তানা গড়ে এই এলাকাকে কলঙ্কিত করেছিলো। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না। তাই আল্লাহর তরফ থেকে তার উপর গজব নেমে আসে। আজ সে কারাগারে বন্দী কিন্তু তাদের লোকজন এখনো এলাকায় সক্রিয় আছে। এখনো তারা চাঁদাবাজি লুটতলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা খবর পাই কিন্তু বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। আমিও প্রতিহিংসার রাজনীতি পছন্দ করি না। তাই এখনো তাদের বাড়িঘর গুলো দাঁড়িয়ে আছে অন্য কোথাও হলে মাটির সাথে মিশিয়ে দিত।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আওতাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির অন্তর্গত ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত প্রাথমিক সদস্য পদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকেলে এলাকায় এ আয়োজন করা হয়।

গিয়াসউদ্দিন বলেন, সিমরাইলের সাথে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখানে আমার মায়ের নানার বাড়ি। আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন এখানে আছে। আমি যখন সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম তখন এই এলাকায় অনেক কাজ করেছি। এই এলাকায় অনেক মুরুব্বিরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। সবার প্রতি আমার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। যারা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।

তিনি বলেন, গত ১৬ বছর স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমাদের বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। আমাদেরকে হয় জেলে থাকতে হয়েছে নাহয় ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থেকেছি। গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে অমানুষিক নির্যাতন করেছে তবুও আমরা পালিয়ে যাইনি। কিন্তু অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পাতি নেতা পর্যন্ত সকলে পালিয়ে গেছে। তাদের যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতো, তারা যদি প্রকৃত রাজনীতিবিদ হতো তাহলে কখনো পালিয়ে যেত না। তারা ক্ষমতায় থেকে দুঃসাশন করেছে, দেশের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। তাই ভয়ে তারা পালিয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সবাই খারাপ তা আমি বলবো না। কিছু কিছু ভালো মানুষও ছিলো আওয়ামী লীগে কিন্তু তাদেরও একটা দোষ আছে। তারা তাদের দলের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেনি। ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে। এখন নির্দলীয় সরকার ক্ষমতায়। এই সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে গণহত্যার যে সকল মামলা দায়ের করা হয়েছে তাতে যেনো কোনো নিরপরাধ মানুষকে আসামি করা না হয়। মামলা গুলো দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক আর যে সকল নির্দোষ মানুষকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আগামী করা হয়েছে তাদেরকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হোক। মিথ্যা মামলার কি জ্বালা তার গত ১৬ বছরে আমরা হারে হারে টের পেয়েছি তাই আমরা চাই না কোন নিরপরাধ মানুষ শাস্তির মুখোমুখি হোক।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুটি কাজ করলেই প্রাথমিকভাবে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে বলে আমি মনে করি। একটি হচ্ছে গণহত্যার বিচার আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে দ্রুত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন। এ দুটি কাজ সুন্দরভাবে করতে পারলেই সংস্কারের মুখ্য অংশটুকু করা হয়ে যাবে। বাকিটুকু নির্বাচিত সরকার এসে সম্পন্ন করবে। এদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলো। স্বৈরাচারী সরকার তিনটি অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের ভোটের অধিকারকে গলাটিপে হত্যা করেছিলো। তাই দেশের মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে ভোট দেয়ার জন্য। দেশের মানুষের এই প্রত্যাশা পূরণ করাটাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী মুন্সির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সদস্য ফরম বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই রাজু, সহসভাপতি জিএম সাদরিল, এস এম আসলাম হোসেনসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ