করোনার কারনে এবারো অনিশ্চিত লাঙ্গলবন্দের পূণ্য স্নান

নারায়ণগঞ্জ মেইল: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহাতীর্থ লাঙলবন্দের স্নান উৎসব গত বছর মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে অনুষ্ঠিত হয়নি। আগামী ১৯ ও ২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনার ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিতে এবারেও এ উৎসব আয়োজন অনেকটা অনিশ্চয়াতর মুখে পরেছে। তাছাড়া আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষনা করেছে সরকার। এমতাবস্থায় স্নান উৎসব আয়োজন প্রায় অসম্ভবই হয়ে দাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার নারায়ণগঞ্জ মেইলকে বলেন, করোনা ভাইরাসের উর্ধ্বগতির কারনে এবারো অনুষ্ঠিত হবে না হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গলবন্দের পূণ্য স্নান। স্নান উৎসব আয়োজনের উপর সকল প্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসনের প্রজ্ঞাপণ দুএকদিনের মধ্যেই ঘোষনা করা হবে।

একই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন নারায়ণগঞ্জ মেইলকে বলেন, আগামী ১৩ এপ্রিল এ বিষয়ে একটি বৈঠক রয়েছে। এ বৈঠকের পরে জানা যাবে স্নান উৎসব আয়োজন হবে কি হবে না।

উল্লেখ্য, হিন্দু পুরান মতে, ত্রেতাযুগের সূচনাকালে মগধ রাজ্যে ভাগীরথীর উপনদী কৌশিকীর তীর ঘেঁষে এক সমৃদ্ধ নগরী ছিল, যার নাম ভোজকোট। এ নগরীতে ঋষি জমদগ্নির পাঁচ পুত্র সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তানের নাম রুষন্নন্ত, দ্বিতীয় পুত্রের নাম সুষেণ, তৃতীয় পুত্রের নাম বসু, চতুর্থ পুত্রের নাম বিশ্বাসুর, পরশুরাম ছিলেন সবার ছোট। পরশুরামের জন্মকালে বিশ্বজুড়ে চলছিল মহাসঙ্কট। একদিন পরশুরামের মা রেণুকা দেবী জল আনতে গঙ্গার তীরে যান। সেখানে পদ্মমালী (মতান্তরে চিত্ররথ) নামক গন্ধবরাজ স্ত্রীসহ জলবিহার করছিলেন (মতান্তরে অপ্সরী গণসহ)। পদ্মমালীর রূপ এবং তাদের সমবেত জলবিহারের দৃশ্য রেণুকা দেবীকে এমনভাবে মোহিত করে যে, তিনি তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন।

অন্যদিকে ঋষি জমদগ্নির হোমবেলা পেরিয়ে যাচ্ছে, সেদিকে তার মোটেও খেয়াল নেই। সম্বিত ফিরে পেয়ে রেণুকা দেবী কলস ভরে ঋষি জমদগ্নির সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ান। তপোবলে ঋষি জমদগ্নি সবকিছু জানতে পেরে রেগে গিয়ে ছেলেদের মাকে হত্যার আদেশ দেন। প্রথম চার ছেলে মাকে হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু পরশুরাম পিতার আদেশে মা এবং আদেশ পালন না করা ভাইদের কুঠার দিয়ে হত্যা করেন। পরবর্তীকালে পিতা খুশি হয়ে বর দিতে চাইলে তিনি মা এবং ভাইদের প্রাণ ফিরে চান। তাতেই রাজি হন ঋষি জমদগ্নি। কিন্তু মাতৃহত্যার পাপে পরশুরামের হাতে কুঠার লেগেই থাকে। অনেক চেষ্টা করেও সে কুঠার খসাতে পারেন না তিনি। এক পর্যায়ে পিতার কথামত পরশুরাম তীর্থে তীর্থে ঘুরতে লাগলেন। শেষে ভারতবর্ষের সব তীর্থ ঘুরে ব্রহ্মপুত্র পুণ্যজলে স্নান করে তার হাতের কুঠার খসে যায়। পরশুরাম মনে মনে ভাবেন, এই পুণ্য বারিধারা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে মানুষ খুব উপকৃত হবে। তাই তিনি হাতের খসে যাওয়া কুঠারকে লাঙ্গলে রূপান্তর করে পাথর কেটে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে মর্ত্যলোকের সমভূমিতে সেই জলধারা নিয়ে আসেন। লাঙ্গল দিয়ে সমভূমির বুক চিরে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হন তিনি। ক্রমাগত ভূমি কর্ষণজনিত শ্রমে পরশুরাম ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানায় এসে তিনি লাঙ্গল চালানো বন্ধ করেন। এই জন্য এই স্থানের নাম হয় লাঙ্গলবন্দ। এরপর এই জলধারা কোমল মাটির বুক চিরে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিশেছে। পরবর্তীকালে এই মিলিত ধারা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে।

আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি ব্রহ্মপুত্র নদের নামকরণ হওয়ার পেছনে মূল কারণ হল ব্রহ্মার এক ছেলে অভিসপ্ত হয়ে নদ রুপ ধারণ করে ও তার নদী জীবন সার্থক এবং মানব কল্যাণে লাগানোর জন্য ভগবান শিব তাকেই বেছে নেয়। যেই নদীতে স্নান করে দশাবতারের একজন পরশুরাম পাপমুক্ত হতে পারে সেই নদীতে যদি আমরা স্নান করতে পারি তাহলে অবশ্যই পাপের বোঝা কমাতে পারব। কিন্তু মনে থাকতে হবে অনুতপ্ততা অর্থাৎ পাপের অনুশোচনা। এই অনুশোচনা না থাকলে হাজার বছর গঙ্গায় ডুব দিলেও কোন লাভ হবে না। আমাদের উচিত মনের ময়লা দূর করে ভক্তি শ্রদ্ধা সহকারে ক্ষমা চাওয়া এবং এই নদীতে স্নান করা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ