দুই বিতর্কিত প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি

নারায়ণগঞ্জ মেইল: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকায় নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনের মধ্যে দুটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জোড়ালো হয়ে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদের মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এ লক্ষ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর লিখিত চিঠিও দিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-৩ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়া দুই প্রার্থী বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা এই দুই প্রার্থীর প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিল করে চূড়ান্ত মনোনয়নে তৃণমূলের আস্থাভাজন কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপি সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। দলের কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অশ্লীল বক্তব্য, সাধারণ জনগনের সাথে অশালীন আচরণসহ চাঁদাবাজির কারণে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মান্নানের বিরুদ্ধে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মান্নান এবং তার পুত্র সজীবের সীমাহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সোনারয়ের  জনগণ। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কিত এবং অশালীন বক্তব্য দেওয়ায় মান্নানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা নিয়ে গঠিত এই আসনে একজন শিক্ষিত এবং বিতর্কহীন ব্যক্তিকে সংসদে দেখতে চান স্থানীয় মানুষ। তা নাহলে আসন্ন নির্বাচনে বিজয় লাভ করা সম্ভব হবে না বিধায় দলের স্বার্থে প্রার্থী পরিবর্তনের  দাবি জানিয়ে আসছে তৃণমূল।

তৃণমূলের দাবির প্রেক্ষিতে প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকায় থাকা আজহারুল ইসলাম মান্নানের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাত বিএনপি নেতা। তারা সবাই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের আবেদনে প্রথমেই স্বাক্ষর করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, এরপর সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ওয়ালিউর রহমান আপেল, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফর, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সভাপতি অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল এবং সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির ১নং সহ-সভাপতি আল মুজাহিদ মল্লিক।

আবেদনের অনুলিপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের বরাবরে দেয়া হয়েছে।

এদিকে গত ৩ নভেম্বর সারাদেশের ২৩৭টি নির্বাচনী আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করেন দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পান শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় বিএনপির তৃণমূলে। দীর্ঘ ১৭ বছর স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে পরিচিত শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদকে ধানের শীষের প্রার্থী ঘোষণা করায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা। তাছাড়া বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে মডেল মাসুদের বিভিন্ন সময়ের ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  মডেল মাসুদের এসব ছবিতে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে নেতাকর্মীদের।

তৃণমূলের দাবি, গত ১৭ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে একদিনের জন্যও রাজপথে দেখা যায়নি মডেল মাসুদকে। বরং সে সময়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিদের সভা সমাবেশে প্রায়ই দেখা মিলেছে তার। দুঃসময়ের আন্দোলন সংগ্রামে যখন সারা দেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে তখন মাসুদুজ্জামান মাসুদ পুরোপুরি ব্যবসায়ী মেজাজে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে পাল্লা দিয়ে সমান তালে ব্যবসা করেছেন, কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

গত ১৭ বছরে সারাদেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা সরকারের মামলা হামলায় জর্জরিত হলেও মডেল মাসুদকে কোনদিন পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ বিরক্ত করেনি। দলের দুঃসময় কেটে যাওয়ায় মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছেন এই ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের আমলে কামানো কোটি কোটি টাকা নিয়ে নেমে পড়েছেন মনোনয়ন কেনার প্রতিযোগিতায়।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দোসর শিল্পপতি মাসুদকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তারা মেনে নিতে পারছেন না। তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এতো বছর যারা রাজপথে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের মধ্য থেকে একজনকে দলীয় মনোনয়ন দিতে হবে।  বিগত দিনে যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকেই দলীয় মনোনয়ন দিতে হবে। যারা আওয়ামী লীগ আমলে মামলা হামলা খায়নি, আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলেমিশে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন আর মোটা টাকার মালিক হয়েছেন, তাদেরকে  ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মানবেন না তারা তাই অবিলম্বে এই ঘোষণা পরিবর্তন করে রাজপথ থেকে মনোনয়ন ঘোষণার দাবি তৃণমূলের।

তৃণমূলের দাবির প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদের মনোনয়ন পরিবর্তন করে তৃণমূলের আস্থাভাজন কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন চারজন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা।

প্রার্থী পরিবর্তনের লিখিত আবেদন পত্রে স্বাক্ষর করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল ইউসুফ খান টিপু এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুল।

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ