নারায়ণগঞ্জ মেইল: একটি প্রতিষ্ঠান ভাড়া নিয়ে আবার সেই প্রতিষ্ঠানই বিভিন্ন জনের কাছে সাব ভাড়া দিয়ে টাকা আদায়, মূল মালিককে না জানিয়ে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের টাকা আত্মসাৎ করাসহ অভিনব কায়দায় প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে জাহেদুল ইসলাম জনি নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। যিনি ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকার ‘চাঁদ নীট কম্পোজিট ইউনিট টু’ ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করে আসছিলেন। প্রায় দুই কোটি টাকা গ্যাস বিল বকেয়া থাকার কারণে গত বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির গ্যাস লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর জনির প্রতারণার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
জানা গেছে, এয়ার নীট কম্পোজিট নামের ডাইং ফ্যাক্টরিটি ভাড়া নিয়ে জাহেদুল ইসলাম জনি ওরফে মোল্লা জনি চাঁদ নীট কম্পোজিট ইউনিট টু নামে প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে আসছে। এয়ার নীট কম্পোজিটের মালিক মুজিবুর রহমান সোহেলের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী রুনু বেগমের কাছ থেকে ১৫ সাম মাস আগে ফ্যাক্টরির সকল যন্ত্রপাতিসহ মাসে পাঁচ লক্ষ টাকায় ভাড়া নেন জাহেদুল ইসলাম জনি। এয়ার নীট কম্পোজিটের বকেয়া গ্যাস বিল পরিশোধ করাসহ ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার চুক্তি করেন যার মধ্যে নগদ মাত্র চার লক্ষ টাকা দেন রুনু বেগমকে। আর বাকি টাকা বকেয়া গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবেন এমন অঙ্গিকার করেছিলেন জনি।
এমনকি অগ্রিম চুক্তি বাবদ টাকা পরিশোধের কারণে মাসে দেড় লক্ষ টাকা কর্তন করে ভাড়া বাবদ সাড়ে তিন লক্ষ টাকা রুনু বেগমকে পরিশোধ করতেন জনি। অথচ বকেয়া গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করে বিভিন্ন কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জাহেদুল ইসলাম জনি। বকেয়া বিল পরিশোধ না করে উল্টো নিজে পরিচালনা করার সময় সেই বিলও পরিশোধ করেনি জনি। প্রতিষ্ঠানটি ভাড়া নেয়ার পর জাহেদুল ইসলাম জনি পৃথক ভাবে বিভিন্ন জনের কাছে প্রতিষ্ঠানটি ভাড়া দেয়। একাংশ নিজে পরিচালনা করলেও কাজ করানোর নামে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে অগ্রিম টাকা নেন।
এছাড়াও গ্যাস বিলের প্রায় দুই কোটি টাকা ও বিদ্যুৎ বিলের প্রায় এক কোটি টাকা পরিশোধ না করে নিজের পকেট ভারি করেছেন। এমনকি পাশের একাধিক ফ্যাক্টরিতে অবৈধ ভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে অর্থ আদায় করেছে জনি। মূলত বিশেষ পেশার দুই ব্যক্তির সহযোগীতায় অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জনি। অভিযোগে রয়েছে, প্রভাবশালীদের নাম ব্যবহার করে বেপরোয়া জনি একজন বিধবার জমিও দখল করেছে। ঐ বিধবাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকিও দিচ্ছে জনি।
এরআগে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির গ্যাস লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জনির সন্ত্রাসীদের দ্বারা অবরুদ্ধ ও লাঞ্চিত হয়েছিল তিতাসের কর্মকর্তারা। পরে পুলিশের সহযোগীতায় লাইন কর্তনকরাসহ তিতাসের আভিযানিক দলটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তিতাসের নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক অফিসের ডিজিএম ইঞ্জিনিয়ার মামুনুল হক জানান, প্রায় দুই কোটি টাকা বকেয়া বিলের দায়ে লাইন কর্তনের জন্য অভিযান চালানো হয় তিতাসের পক্ষথেকে। এরআগে চার বার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও রহস্যজনক ভাবে পুনরায় সংযোগ দেয়া হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটিতে। এদিকে, বৃহস্পতিবার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর পুনরায় গ্যাস সংযোগ চালু করতে দৌড়ঝাপ করছেন জনি। ব্যবসার নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে জনির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।