ভোটের মাঠে পাকা খেলোয়াড় গিয়াসউদ্দিন

নারায়ণগঞ্জ মেইল: আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভোটারদের দাবির প্রেক্ষিতে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: গিয়াসউদ্দিন।

রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের মতে, ভোটের মাঠে গিয়াসউদ্দিন একজন পাকা খেলোয়াড়। নির্বাচন কি করে করতে হয় তৃণমূল পর্যায়ে থেকে তিনি শিখে এসেছেন‌। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তিনি বিজয়ী হয়ে এসেছেন তাই নির্বাচন কি করে করতে হয় তা গিয়াসউদ্দিনের চেয়ে ভালো আর কেউ জানেন না।

গিয়াস উদ্দিনের এই গুণের কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ সাবেক এমপি মোঃ গিয়াসউদ্দিনকে নির্বাচনের মাঠে দেখতে চায়। দীর্ঘদিন নির্বাচনে ভোট দিতে না পারা নারায়ণগঞ্জের মানুষ গিয়াসউদ্দিনের মত অভিজ্ঞ আর দক্ষ রাজনীতিবিদকে নির্বাচনে দেখতে মরিয়া হয়ে গেছে।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সবচেয়ে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ সাবেক এমপি মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের পিছনে ফেলে জয় ছিনিয়ে আনতে গিয়াসউদ্দিনের অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। তাই এ আসনে গিয়াসউদ্দিনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে বলেই মনে করেন সকলে।

সূত্র বলছে, ফতুল্লার অলিগলি রাজপথ সব গিয়াসউদ্দিনের নখদর্পণে। দীর্ঘ কয়েক যুগ এই এলাকায় রাজনীতি করেছেন তিনি, রয়েছে প্রচুর নেতাকর্মী এবং সমর্থক। তাছাড়া ব্যক্তি জনপ্রিয়তায় সবাইকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। গত এক বছর জেলা বিএনপির সাথে পাল্লা দিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করেছেন গিয়াস উদ্দিন এবং পুরো জেলা বিএনপির চেয়ে বেশি সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত থেকেছে গিয়াসউদ্দিনের কর্মসূচিতে। তাই ফতুল্লা নির্বাচনী আসনে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।

সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। এই আসনে বিএনপি তাদের দলীয় প্রার্থী না দিয়ে জোট থেকে জমিয়তে ইসলাম বাংলাদেশের মুফতি মনির হোসেন কাসেমীকে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে ফতুল্লার ভোটের হিসেব নিকেশ পর্যালোচনা করে মনে হচ্ছে, এই আসনে বিএনপি তাদের দলীয় প্রার্থী না দেওয়ায় আসনটি হারাবার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এই আসনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের একজন হেভিওয়েট প্রার্থী মাওলানা আব্দুল জব্বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাছাড়া এই আসনে মুফতি মনির হোসেন কাসেমীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় বিএনপি’র বেশিরভাগ নেতাকর্মী হতাশ। দীর্ঘদিন তারা এই আসনে ধানের শীষে ভোট দিতে পারে নাই। সেই আক্ষেপ থেকে তারা বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতি বোদ্ধারা।

ঘটনা বিশ্লেষণে জানা যায়, জমিয়ত নেতা মুফতি মনির হোসেন কাসেমীর ব্যক্তি জনপ্রিয়তা নেই বললেই চলে। ফতুল্লার সাধারণ ভোটাররা তার পাশে নেই, এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে।। ফতুল্লাবাসী মনির হোসেন কাসেমীকে রীতিমতো প্রত্যাখ্যান করেছে। কাশেমীর ডাকে সাড়া দেয়নি ফতুল্লার মানুষ। গত শনিবার ১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের জনসভায়। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিন আহমেদকে এনেও দর্শক টানতে পারেননি কাসেমী। সুপারফ্লপ হয়েছে তার “আজমতে সাহাবা” নামক নির্বাচনী শোডাউন।

সূত্র বলছে, বাংলাদেশে চলছে নির্বাচনী মৌসুম, চারিদিকে নির্বাচনে হাওয়া। এবারের নির্বাচনী সীমানা বিন্যাসে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন নারায়ণগঞ্জ-৪ গঠিত হয়েছে ফতুল্লা থানার পাঁচটি ইউনিয়ন এবং সদর থানার অন্তর্গত আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়ন নিয়ে। ফতুল্লা চিরকালীনই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ২০১৮ সালে বিএনপি দলীয় প্রতীক ধানের শীষের মনোনয়ন দেয়া হয় জোটের শরীক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মুফতি মনির হোসেন কাসেমীকে।

মনোনয়ন পাওয়ার পরে কাসেমীর সার্বক্ষণিক সঙ্গি হিসেবে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বিতর্কিত চরিত্র হেফাজত নেতা মাওলানা ফেরদৌসুর রহমানকে। এই ফেরদাউস নারায়ণগঞ্জের গডফাদার ওসমান পরিবারের দোসর হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত হলেও তাকে নিয়েই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন ধানের শীষের কান্ডারী মনির হোসেন কাসেমী। যার ফলে বিএনপির নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীর অর্ধেক তার কাছ থেকে ছুটে যায়। নির্বাচনের আগে তার নির্বাচনী প্রচারণায় কখনো মনে হয়নি তিনি জয়ের জন্য মাঠে নেমেছেন বরং তাকে দেখে মনে হয়েছে ওসমান পরিবারের নির্দেশনায় তিনি নির্বাচনের অভিনয় করছেন। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে তিনি অসুস্থতার ভান করে হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন এবং নির্বাচনী মাঠ ফাঁকা করে শামীম ওসমানকে ছেড়ে দেন। সেই সময় বিএনপি’র কোনো নেতাকর্মীদের সাথে আর যোগাযোগ রাখেননি তিনি।

কাসেমীর সেই ড্যামি নির্বাচনের কথা এখনো ভুলে যায়নি ফতুল্লার মানুষ। তাই কাসেমীকে প্রার্থী হিসেবে তারা মেনে নিতে পারেননি যার প্রমাণ মিলেছে গত শনিবার কেন্দ্রীয় ঈদগাহের জনসভায় কাসেমীর পক্ষে তেমন কোন নেতাকর্মী সেদিন মাঠে উপস্থিত ছিলেন না। যা কিছু লোক দেখা গেছে তা সব বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এতে বোঝা যায় কাসেমী জনসমর্থনহীন, ফতুল্লার মানুষ এমপি প্রার্থী হিসেবে কাসেমীকে চায়না।

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ