নারায়ণগঞ্জ মেইল: নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, হুমকি-ধমকি, বিরোধী পক্ষকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগ, আলোচিত গাড়ি কেলেঙ্কারি—এসবের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের বিএনপি মনোনীত খসড়া প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ।
অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ৪০ কোটি টাকার ঋণ
অভিযোগ অনুযায়ী, ‘মেসার্স এস অ্যান্ড জে স্টিল’ নামে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ২০১৩ সালের মার্চে ৪০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করা হয়। সরেজমিনে তদন্তে প্রতিষ্ঠানটির ঘোষিত ঠিকানায় কোনো কার্যালয় বা কার্যক্রমের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।
ব্যাংক সূত্র জানায়, ঋণের সুদসহ বর্তমান স্থিতি প্রায় ১২২ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গঠনের দুই মাসও না পেরোতেই বিপুল অঙ্কের এ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়—যা ব্যাংকিং নিয়ম ও ঝুঁকি মূল্যায়নের প্রচলিত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ভুয়া দলিল ও বিতর্কিত বন্ধক
ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে যে জমিগুলো বন্ধক দেখানো হয়েছে, সেগুলোর মালিকানা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
একটি জমির ক্ষেত্রে প্রকৃত মালিক সাহানা ইয়াসমিন হলেও, জালিয়াতির মাধ্যমে লতিফা সুলতানা (৭৯)–কে মালিক দেখিয়ে ভুয়া রেকর্ড ও নামজারি তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে সাহানা ইয়াসমিন ২০০৯ সালে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন এবং ২০১২ সালে তার পক্ষে রায় হয়। ফলে ভুয়া রেকর্ড বাতিল হয়।
অভিযোগ রয়েছে, মামলার বিচারাধীন সময়ের ফাঁকেই ওই জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া হয়।
আরেকটি জমি, যা জলাভূমি (বিল) হিসেবে শ্রেণিভুক্ত, সেটিও অতি মূল্যায়নের মাধ্যমে বন্ধক দেখানো হয়। সাব-কবলা দলিলে জমির পরিমাণের সঙ্গে বন্ধক দেওয়া জমির পরিমাণের অসামঞ্জস্য পাওয়া গেছে।
ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির যোগসূত্র
ঋণ অনুমোদনের পেছনে তৎকালীন বেসিক ব্যাংক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ উঠেছে। আব্দুল হাই বাচ্চুসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের একাধিক মামলা থাকলেও, নজরুল ইসলাম আজাদ এখনো আইনের আওতার বাইরে রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে ঋণটি শ্রেণিভুক্ত (ক্ষতিগ্রস্ত) হিসেবে চিহ্নিত, এবং ব্যাংক মামলা দায়ের করেছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সংশয় ও মনোনয়ন ঝুঁকি
আড়াইহাজারে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেই নজরুল ইসলাম আজাদকে নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয় ও অস্বস্তি। ঋণখেলাপি ও গুরুতর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার মনোনয়ন টিকে থাকবে কি না—সে প্রশ্ন উঠেছে। শেষ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের যাচাইয়ে মনোনয়ন বাতিল হলে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা, এমন আলোচনাও রয়েছে।
বক্তব্য পাওয়া যায়নি
এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম আজাদের বক্তব্য নিতে একাধিকবার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
উপসংহার
নজরুল ইসলাম আজাদকে ঘিরে ওঠা এসব অভিযোগ—ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি, ভুয়া দলিল, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর সন্দেহ—সব মিলিয়ে শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং ব্যাংকিং ব্যবস্থা, ভূমি প্রশাসন ও রাজনৈতিক শুদ্ধতার প্রশ্ন সামনে এনে দিয়েছে। অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যকর পদক্ষেপই পারে এ বিষয়ে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে।
