নারায়ণগঞ্জ মেইল: ঈদুল ফিতর আসে পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা শেষে। গত বছরের মতো এবারও এ ঈদ এসেছে করোনার চলমান অতিমারির দুঃসহ সময়ে। হিজরি বর্ষচক্র চাঁদনির্ভর। ঈদের চাঁদ তো রহস্যময়। কখনো তা ওঠে ২৯ রমজানে, কখনো ৩০-এ। গত বুধবার আকাশে শাওয়াল মাসের নতুন বাঁকা চাঁদ দেখা যায়নি। তাই আজ শুক্রবার উদ্যাপিত হচ্ছে ইসলাম ধর্মের প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতর। এবারও অনেকের জীবনে ঈদের আনন্দে ছায়া ফেলছে অতিমারির নানা দুঃসংবাদ।
করোনা অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর এবারও রমজান মাসের শুরু থেকে দেশজুড়ে দেখা দেয় উদ্বেগ। সংক্রমণ আর প্রাণহানির সংখ্যা ওপরে উঠতে থাকায় সরকার আবারও গত বছরের মতো লকডাউন ঘোষণা করে। এপ্রিলের মাঝামাঝি লকডাউন শুরু হয়। রোজার শেষ পর্যায়ে ঈদের কেনাকাটার জন্য স্বাস্থ্যবিধি আর নিয়মকানুন মেনে বিপণিবিতান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বিপণিবিতানে ঈদের উপচানো আনন্দের সেই ভিড় আর ব্যস্ততার দৃশ্য আর ফিরে আসেনি। ঈদের ব্যবসায় এবারও ছিল মন্দা।
স্থানীয় যানবাহন চলাচলের নিয়ন্ত্রণ অপেক্ষাকৃত শিথিল করা হলেও দূরপাল্লার বাস এখনো বন্ধ রয়েছে। ট্রেন-লঞ্চের অবস্থাও তা-ই। ঈদে গ্রামের বাড়িতে ফেরা নিয়ে স্টেশন-টার্মিনালে দীর্ঘ লাইন আর গিজগিজে ভিড়ের চিরাচরিত দৃশ্যটি ছিল না। অনেকেই শহর ছাড়েছেন, তবে বিকল্প পথে। কিন্তু ফেরিঘাটে গিয়ে গাদাগাদি করে ফেরি পার তো হতেই হয়, বিশেষ করে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল ফেরি চলাচলেও। অবশ্য শেষ মুহূর্তে তা কিছুটা অনেকটাই শিথিল করা হয়।
আমজনতার ঈদের মেজাজই আলাদা। মেজাজ বিগড়ে দেওয়া যানজট ঠেলে এ মার্কেট-সে মার্কেট ঘোরা, তুমুল দর–কষাকষি করে পছন্দের জিনিসটি কিনে জয়ীর অনুভূতি নিয়ে ঘরে ফেরা, সাধ আর সাধ্যের সমীকরণ মেলানোর জন্য গলদঘর্ম হওয়া, মসজিদে আর ঈদগাহে ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি। করোনার ঊর্ধ্বগতি সে আনন্দে বাদ সেধেছে। গত বছরের মলিন ঈদে অনেকে প্রত্যাশা রেখেছিলেন পরের বছরের করোনাবিহীন ঈদের অমলিন আনন্দে। তাঁদের প্রত্যাশা ভঙ্গ হয়েছে।
মানুষ তবু স্থির হয়ে থাকে না, তারা চলমান। ঘরের মধ্যেই সবাই তৈরি করে নেবে ঈদের আনন্দময় পরিসর। পরিবারের সঙ্গে ভাগ করে নেবে নিকটজনদের উষ্ণতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোঁজ নেবে প্রিয় মানুষদের, টেলিভিশন আর অন্তর্জালের রঙিন বিনোদনের দুনিয়ায় মন সঁপে দেবে।
আরও থাকবেন কেউ কেউ, তাঁরা বের হয়ে আসবেন এই দুঃসময়ে যারা অসহায়, তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে। কাউকে সহায়তা করবেন চিকিৎসায়, কাউকে দেবেন খাদ্য বা বস্ত্র, পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন কোনো আর্ত মানুষের। তাঁদের ব্যক্তিগত ঈদের আনন্দ মিশে যাবে অন্য আরও অনেকের স্বস্তি আর আনন্দের সঙ্গে। সংযমের কঠোর সাধনার পর ঈদের উৎসবের সৌন্দর্যই মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগে। সবার প্রত্যাশা, ঈদ স্বস্তি আর আনন্দের সৌন্দর্য নিয়েই যেন এসেছে।