নারায়ণগঞ্জ মেইল: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন দুর্গাপূজার আর কয়েকদিন বাকি। কিন্তু অন্য বছরের মতো এবার তেমন তোড়জোর নেই। পূজার প্রস্তুতির চিত্র খানিকটা উল্টো। করোনা সংকটে দেশের সব জায়গায় নানা বিধিনিষেধের মধ্যে আয়োজন হবে দুর্গাপূজা। তাই মূর্তি তৈরির অর্ডারও কমে গেছে। নারায়ণগঞ্জে প্রতিমা তৈরি প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও তাতে উৎসবের আমেজ খুব একটা নেই। গেল বছর নারায়ণগঞ্জে ২০৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হয়। এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৯৯টি মন্ডপে। এমনকি কুমারি পূজাও হচ্ছে না এবার নারায়ণগঞ্জে। ফলে পূজা থাকলেও নেই উৎসবের কোন আমেজ। প্রতি বছর নারায়ণগঞ্জের প্রধাণ প্রধাণ সড়কগুলো তোড়নে তোড়নে ছেয়ে যেতো, আলোকসজ্জা আর জাঁকজমকের প্রতিযোগিতা চলতো। নারায়ণগঞ্জের রাস্তায় বের হলেই পূজার একটা আবহ চোখে পরতো। কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমন প্রতিরোধে এবার দূর্গাপূজার সকল আয়োজন সংক্ষিপ্ত করে আনা হয়েছে। যার ফলে এবারের দূর্গাপুজোয় কোথাও নেই উৎসবের আমেজ।
আসন্ন দূর্গাপূজো সফল করতে নারায়ণগঞ্জের পূজা উদযাপন পরিষদ নেতারা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। সেসব সভায় পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছিলেন, এবার পূজা হবে, উৎসব হবে না। শারদীয় দূর্গা পূজা আয়োজনে নারায়ণগঞ্জের মন্ডপগুলোতে যে সকল সমস্যা রয়েছে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এবারের পূজায় সকলকে কোভিড-১৯ থেকে রক্ষার জন্যে সকলে সচেতন থাকতে হবে এবং অতিরিক্ত জনসমাগম পরিহার করতে হবে। কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে এবারের দূর্গা পূজা পালনের বিষয়ে ২৬টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে সকলে দূর্গা পূজা আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। অনেক মন্দির কতৃপক্ষ শংকায় ছিলেন এবারে পূজা অনুষ্ঠিত হবে কিনা। আমাদের কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ সরকারের সাথে আলোচনা করে পূজা আয়োজনের বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছেন তবে সেই সাথে ২৬টি নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমাদের সকলকে সে নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
এছাড়াও মন্ডপগুলোতে বাদ্য বাজনার ব্যবস্থা রাখা যাবে না, কোন প্রকার অতিরিক্ত লাইটিং থাকবে না। প্রতিটি মন্ডপে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শুধুমাত্র ধর্মীয় অচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূজা পালন করতে হবে। প্রতিমার আয়তন যাতে কোনভাবেই তিন ফুটের বেশী না হয় যাতে করে ৫জনে মিলে উঠিয়ে নেয়া যায়। প্রতিটি মন্ডপে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। আরেকটি বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে আর সেটা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কোন প্যানিক সৃষ্টি করা যাবে না। কোথাও কোন সমস্যা তৈরী হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন, প্রয়োজনে নিকটস্থ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতি কোনভাবেই নষ্ট করা যাবে না।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় উৎসব যেমন মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দের পূণ্যস্নান, জগন্নাথদেবের রথ যাত্রা ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর আয়োজন সীমিত আকারে পালিত হওয়ায় হিন্দুদের সর্ব বৃহত ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দূর্গা পূজা আয়োজন নিয়ে যারা শংকিত ছিলেন তাদের সেই শংকা দুর হয়েছে। তবে অবশ্যই সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে এবং অবশ্যই সন্ধ্যার আলো থাকতে থাকতেই বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে।
এবারের পূজার প্রস্তুতির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন জানান, পূজার সকল আয়োজন ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রশাসনসহ সকল দফতরের সাথে আমরা মত বিনিময় করেছি। করোনাকালীন সময়ে যথার্থ স্বাস্থ্য বিধি মেনে দূর্গোৎসব পালনের জন্যে সকল মন্ডপগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে। এবার সকল আড়ম্বর পরিহার করে স্বাত্তিক পূজা পালনের দিকে জোর দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ধর্ম কর্ণ নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।