নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সারা বাংলাদেশের চেয়ে আলাদা। এখানে সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই, এখানে সব সমান। বাংলাদেশে কোথাও এমনটা নেই। আমাদের নারায়ণগঞ্জে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকল ধর্মের সমাধিস্থল পাশাপাশি অবস্থিত।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার (২৩ জুন) নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে এ আয়োজন করা হয়।
শামীম ওসমান বলেন, আমরা যখন রাজনীতিতে আসি তখন স্লোগান ছিল তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি, বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো। এখন বলতে হবে বীর বাঙালি ঐক্য গড়ো বাংলাদেশ রক্ষা করো।
তিনি বলেন, আপনার বিশ্বাস আপনার, আমরটা আমার। আপনি আপনারটা করবেন, আমি আমারটা করবো। সব ধর্মেই বলা আছে। আল্লাহ ও তাদের প্রেরিত নেক বান্দার পরেই মা-বাবার স্থান। সেই প্রকৃত ভাল মানুষ যে তার মা-বাবাকে সেবা করে। এটা আমি বিশ্বাস করি। আমি অনুরোধ করবো, মায়ের দোয়া কখনও বিফলে যায় না। তাই আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই।
সুন্দর বাংলাদেশের জন্য আগে নিজের পরিবারকে সুন্দর করুন। সত্য আঘাতপ্রাপ্ত হয় কিন্তু সত্যের জয় হবেই। আজ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। এখনও এখানে ওই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে দুটো দল। একটা আওয়ামী লীগ আরেকটা এন্টি আওয়ামী লীগ। আমরা শেখ হাসিনার কাছে চাইতেই আছি। আমরা কী দিয়েছি তাকে। তার বাবা বলেছেন আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। পাকিস্তানিরা তাকে মারতে সাহস পায়নি। তাকে মেরেছি আমরা। তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের জন্য এসেছিলাম। আজ যদি শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা বেঁচে না থাকতেন তাহলে কী হত।
শামীম ওসমান বলেন, আজ থেকে বাইশ বছর আগের ঘটনা। ২০০১ সালে আড়াইহাজারে একটা নির্বাচনী সভায় গিয়েছিলাম। প্রচণ্ড গরম তখন। শেখ হাসিনা আসলেন বক্তব্য দিলেন। আমার সারা শরীর তখন ঘামে ভেজা। তখন তাকে গোপালগঞ্জে অলরেডি হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি কঠোর নিরাপত্তায় ছিলেন। তাকে বিদায় দিলাম। কিছুক্ষণ পর এসএসএফ এসে বলল আপনাকে প্রধানমন্ত্রী ডাকছে। আমি গেলাম। তিনি বললেন, শামীম আমার সঙ্গে যাবি, চান্দিনায় প্রোগ্রাম। আমি গেলাম তার সঙ্গে। হেলিকপ্টারে গেলাম সেখানে গ্রামের মানুষ। হাত তুলে ডাকছে হাসিনা হাসিনা বলে। প্রধানমন্ত্রী ঘুরে তাদের দিকে যেতে লাগলেন। তখন এসএসএফ তাকে বাধা দিল, তিনি বললেন এরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। ওরা আমাকে মারবে না। তিনি গিয়ে তাদের বুকে জড়িয়ে ধরছেন। তিনি দেখলাম চোখ বন্ধ করে তাদের দোয়া নিলেন। হেলিকপ্টারে উঠে দেখলাম তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু তিনি হাসছেন। আমি বললাম আপা কী হয়েছে। তিনি বললেন, ওরা যখন আমাকে জড়িয়ে ধরছিল আমার মনে হচ্ছিল আমার মা আমার বাবা আমার জন্য দোয়া করছে।
নারায়ণগঞ্জে একটা দেবোত্তর সম্পত্তি আছে। আমি শুধু বলব আদালতে এরা বিচারাধীন। আদালত অবশ্যই ন্যায় বিচার করবে। আমার অনুরোধ নারায়ণগঞ্জ একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা।
তিনি আরও বলেন, আমি সিটি করপোরেশনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। সিটি করপোরেশনের মানুষ ট্যাক্স দেয়। ঢাকা সিটি করপোরেশন যদি ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করতে পারে আপনারাও করবেন। ঈদ উল ফিতরে তো আমরাই করি।
সমঅধিকার ও সমমর্যাদা রক্ষার প্রত্যয়ে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে এই প্রথম জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের দ্বি- বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান।
সম্মেলনের মধ্যদিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নতুন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শংকর কুমার দে ও সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও মহানগরে সভাপতি বিষ্ণুপদ সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সুশীল দাস নির্বাচিত হন।
সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীতের সাথে সাথে জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।
পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা পরিষদের সম্মেলন উপলক্ষে নগরীতে হাজারো হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী – পুরুষ রকমারি শাড়ি, লুঙ্গি ও মাথায় লাল রঙের ক্যাপ পরিধান করে এবং ব্যানার ফেস্টুনে সু-সজ্জিত হয়ে অংশগ্রহণে ঢাক ঢোল বাজনা বাজিয়ে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুরাতন কোর্টস্থ জেলা শিল্পকলা একাডেমী সামনে এসে সমাপ্ত হয়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বি- বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নগরীতে উৎসব মুখর পরিবেশে বিরাজ করেছে ।
সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন থানা, উপজেলা ও ওয়ার্ড সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ব্যানার- ফেস্টুনে সু-সজ্জিত হয়ে মিছিলে মিছিলে সমবেত হয়ে সম্মেলন সাফল্য মন্ডিত করে তোলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র গীতা পাঠ করা হয় । পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের প্রয়াত সকল নেতাকর্মীদের আত্মার শান্তি কামনা করে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব শিখন সরকার শিপন। পরে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এসময়ে অতিথিদেরকে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শংকর কুমার দে’র সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শিখন সরকার শিপনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রী জেএল ভৌমিক, প্রধান বক্তা বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শ্রী ডি এন চ্যাটার্জী, সম্মানিত অতিথি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা।
এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. কিশোর রঞ্জন মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী দীপক পাল দীপু, বারদী শ্রী শ্রী লোকনাথ কর্মচারী আশ্রমের আহবায়ক ও সাবেক সচিব শ্রী অশোক মাধক রায়, এফবিসিসিআই এর পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা, পানাম গ্রুপের ব্যবস্থার পরিচালক সিআইপি অমল পোদ্দার, সরকারি তোলারাম কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক জীবন কৃষ্ণ মোদক, নারায়ণগঞ্জ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি পরিতোষ কান্তি সাহা, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, মহতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার সাহা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রজত কুমার সুর রাজু, সহ- মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. সঞ্চিতা গুহ চৈতী, সহ- সমাজ কল্যাণ সম্পাদক শ্রী বিপুল ঘোষ শংকর, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক তমাল সাহা।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত মন্ডল, মহানগরের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দে, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাংবাদিক উত্তম কুমার সাহা, সোনারগাঁ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লোকনাথ দত্ত, সিদ্ধিরগঞ্জের সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, বন্দরের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, রূপগঞ্জের সভাপতি গনেশ পাল, আড়াইহাজারের সভাপতি হারাধন চন্দ্র দে, ফতুল্লার সভাপতি প্রদীপ মন্ডলসহ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।