নারায়ণগঞ্জ মেইল: বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী জেলা নারায়ণগঞ্জ হলেও করোনা ভাইরাসের কারণে চলমান লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছোবল মারার পর থেকে ধনী জেলার ধনী মানুষরা আত্মগোপনে আছেন। নারায়ণগঞ্জের অসহায় মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেয়া করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বাংলাদেশেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পরছে সর্বত্র। গত পহেলা জুলাই থেকে সারাদেশে সর্বাত্বক লকডাউন চলছে। শুধুমাত্র শিল্প কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখা হয়েছে আর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, শপিং সেন্টার, মার্কেট দোকানপাট। শুধুমাত্র রিক্সা আর পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ। এতে করে দেশের একটা বিশাল খেটে খাওয়া শ্রেণি কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
মহামারী করোনাভাইরাস গতবছরের মার্চ মাসে আঘাত হানার পরে নারায়ণগঞ্জের ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অনেকেই। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান এসব অসহায় লোকজনদের সাহায্যে ঘোষণা করেছিলেন কোটি টাকার অনুদান। এছাড়াও সাংসদের পক্ষে তার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা খাদ্য সামগ্রীসহ নানা প্রয়োজনীয় সাহায্য নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় নারায়ণগঞ্জের অসহায় মানুষের পাশে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এখনো কোন আওয়ামী লীগ নেতাকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।
সাংসদ শামীম ওসমানের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোঃ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা করোনার প্রথম ঢেউয়ে সাধারণ মানুষকে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ে তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিজেকে খোলসে বন্দি করে রেখেছেন। সাধারণ মানুষের সাহায্যে নিজ উদ্যোগে কোন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে এখন পর্যন্ত তাকে দেখা যায়নি।
সরকারি দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র অনেক ধনী নেতাও এগিয়ে এসেছিলেন অসহায় মানুষের পাশে। করোনার প্রথম ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে সামর্থ্যবান বিএনপি নেতারা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে দরিদ্র মানুষকে প্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে যখন টালমাটাল পুরো দেশ, একটানা লকডাউনে কর্মহীন নারায়ণগঞ্জের হাজার হাজার মানুষ তখন আর কাউকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে দেখা যাচ্ছে না, এমনকি অসহায় দলীয় নেতাকর্মীদের সাহায্যেও এগিয়ে আসছে না নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র কোনো শীর্ষ নেতা।
করোনার প্রথম ধাক্কায় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ বিএনপি ছাড়াও দেশের সবচেয়ে ধনী জেলা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্তরের সামর্থ্যবান লোকজন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এমনকি ব্যক্তি পর্যায়েও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছিল। করোনাকালে সাধারণ মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করে নানা উপাধি আর বিশেষণে ভূষিত হয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাতে যখন নারায়ণগঞ্জে কর্মহীন অসংখ্য মানুষ খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে, তখন ঐসব করোনা বীর, বীর বাহাদুর, মানবতার ফেরিওয়ালা, মানবতার মাসহ বিভিন্ন উপাধি পাওয়া কাউকে আর দৃশ্যপটে দেখা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, দেশের শীর্ষ ধনী ১০ জেলার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ১ম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানার আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপ ২০১৬-তে এই তথ্য পাওয়া গেছে। সাম্প্রতি এই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করা হয়। সেখানে প্রথমবারের মতো জেলাওয়ারি ধনী-দরিদ্র্য পরিস্থিতি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তালিকায় প্রথম স্থানে আছে প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ। এই জেলার প্রতি ১০০ জনে গড়ে ২ দশমিক ৬ জন মানুষ গরিব। বাকিরা সবাই দারিদ্র্যসীমার ওপরে বাস করেন।