নারায়ণগঞ্জ মেইল: করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন চললেও গত ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন চলছে। আর এই লকডাউনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। গত কয়েক মাসের তুলনায় নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হার বেড়েছে। তবে তা তোয়াক্কা না করেই সাধারণ মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। লকডাউন কঠোর ভাবে বাস্তবায়ন ছাড়াও জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তৎপর রয়েছেন জেলা পুলিশ।
জানা গেছে, সম্প্রতি ফতুল্লায় যে কয়টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে সেই প্রতিটি মামলার আসামী গ্রেফতার হয়েছে। শুধু হত্যাকান্ডই নয়, ধর্ষণ কিংবা মারামারি যে কোন বিষয়ই তৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়ে আসামীদের গ্রেফতার করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে পুলিশ। সূত্র বলছে, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে নারায়ণগঞ্জবাসী যখন ঘরে বন্দি তখন গৃহবন্দি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও করেনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কঠোর পরিশ্রম করে সাধারণ মানুষ আস্থা অর্জন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সদস্যরা। অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন জেলা পুলিশ।
তবে পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকির কথা চিন্তা করে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।
এসপি জায়েদুল আলম নারায়ণগঞ্জ মেইলকে বলেন, পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশ সদস্যদের মাঝে ভিটামিন জাতীয় খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে। তারপরও মাঠ পর্যায়ে কাজ করলে ঝুঁকি তো থাকবেই। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছি আমরা।
এদিকে মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী চলছে কঠোর বিধি-নিষেধ। আর এ বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সদস্যরা। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জে শিল্প নগরী হিসেবে পরিচিত ফতুল্লা এলাকা। ফতুল্লার বিসিকে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ করে। এছাড়াও জেলার সবচেয়ে ঘনবসতি ও বিশাল এলাকা নিয়ে ফতুল্লা থানা। করোনার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ফতুল্লা এলাকায়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কঠোর পরিশ্রম করে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কাজ করছে ফতুল্লা থানা পুলিশ। এছাড়াও সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ফতুল্লাবাসী। কিন্তু জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ফতুল্লাবাসীর উদ্বেগ দূর করে দিয়েছেন ফতুল্লা থানার ওসি রকিবুজ্জামান। সম্প্রতি ফতুল্লায় যে কয়টি ঘটনা ঘটেছে, প্রতিটি মামলার আসামী গ্রেফতার হয়েছে। সর্বশেষ ফতুল্লায় মিশুক চালককে হত্যা করে মিশুন ছিনিয়ে নিয়েগিয়েছিল অজ্ঞাত আসামীরা। সে ঘটনায় মামলা দায়ের পর মিশুক উদ্ধারসহ আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে ফতুল্লা থানা পুলিশ।
ফতুল্লার মত সিদ্ধিরগঞ্জও শিল্প অধ্যুষিত এলাকা। বিশেষ করে আদমজী ইপিজেড এলাকায় প্রচুর শ্রমিক কাজ করেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে এখানে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। আর সে কাজটি এখানে সুষ্ঠুভাবে করে যাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ সদর, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জসহ পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা।
দেশের এ সংকটে অনেক মানবিক দৃষ্টান্ত সামনে আসছে। তবে পুলিশের মানবিক উদ্যোগ ও নিরলস কাজ এই বাহিনীকে নতুনভাবে উপস্থাপন করছে সাধারণ মানুষের কাছে। কোভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্কে মানুষ। আর সব ভয় অতিক্রম করে সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন জেলা পুলিশ সদস্যরা। প্রয়োজনে ঝুঁকিও নিতে হচ্ছে। দেশে সৃষ্ট এ অচলাবস্থায় মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি মানবিক কাজেও এগিয়ে আসছেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।