নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জে একের পর এক লাশ উদ্ধারের ঘটনায় যখন শহরজুড়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে, তার মধ্যেই নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি ও সর্বত্র সমালোচনা জন্ম দিয়েছে খানপুরে এক দারোয়ানকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা। যা এখন টক অব দ্যা টাউন। একই সাথে এমন লোমহর্ষক ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে নগরীর একাধিক প্রভাবশালী মহল।
সোমবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) অধীনস্থ ওয়াসার জোড়া পানির টাংকির বাউন্ডারির ভেতরে কথিত টর্চার সেলে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
নিহতের নাম হানিফ (৩৫)। তিনি খানপুরের জিতু ভিলায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করতেন। স্থানীয়ভাবে পরিচিত এই ওয়াসা এলাকার ভেতরে বিএনপির নামধারী কিছু ব্যক্তির টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হতো বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর দাবি, প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে চলে মাদক সেবন, চাঁদাবাজি, এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
ঘটনার বিবরণ
নিহতের বোন জয়নাব ওরফে রাবেয়া জানান, সোমবার দুপুরে হানিফ ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় খানপুরের অভিসহ কয়েকজন লোক ঘরে ঢুকে তাকে লাথি মেরে বিছানা থেকে ফেলে দেয়। এরপর তার মাথা দেয়ালে ঠুকে দেয় এবং টেনে-হিঁচড়ে ওয়াসার জোড়া পানির টাংকির ভেতরে নিয়ে যায়। তারা দাবি করে, হানিফ ১২–১৩ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে। তবে রাবেয়ার দাবি, যাকে নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, সেই মেয়েটি সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছে—অর্থাৎ অভিযোগটি ভিত্তিহীন।
রাবেয়া বলেন, “ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। পরে আমাদেরও ডেকে নেয় টাংকির নিচে। আমার স্বামী ইবরাহিমকে ওরা চরথাপ্পড় মারে, লুঙ্গি টান দিয়ে খুলে ফেলার চেষ্টা করে। আমাদের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।”
পরে সন্ধ্যায় খবর আসে, হানিফকে মারধর শেষে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের অভিযোগ
নিহতের ভগ্নিপতি ইবরাহিম বলেন, “ওরা আমাদের কাছ থেকে টাকা চেয়েছিল। টাকা দিতে না পারায় হানিফকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলে। আমার শালিকা ও আমাকে পর্যন্ত হুমকি দিয়েছে।”
রাবেয়া আরও জানান, হানিফের তিন সন্তান রয়েছে—বড়টির বয়স ৬ বছর, মেঝটির আড়াই বছর এবং ছোটটির বয়স মাত্র ৬ মাস। তিনি বলেন, “আমার ভাই যদি অপরাধীও হতো, তবু দেশে তো আইন আদালত আছে। তাকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো কেন?”
পুলিশের বক্তব্য
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির আহমদ জানান, “ধর্ষণের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার খবর আমরা পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পটভূমি ও জনমত
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খানপুরের জোড়া টাংকির ঘেরা এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই কথিত টর্চার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে মাদক লেনদেন, চাঁদাবাজি এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক এই হত্যাকাণ্ড শহরজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
উপসংহার
ঘটনার পর থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি এবং পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছেন।