নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জে ফুটপাতের হকারদের সঙ্গে প্রশাসনের ইদুর বিড়াল খেলার শেষ দেখতে চায় নগরবাসী। ঢাক ঢোল পিটিয়ে প্রশাসনের লোকজন ফুটপাত হকারমুক্ত করে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আবার হকাররা যে যার অবস্থানে বসে যায়। দীর্ঘদিন যাবত চলে আসা এ নাটকের অবসান ঘটিয়ে পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য সিটি মেয়র ও প্রশাসনের দৃষ্টি আ্কর্ষণ করেছে নারায়ণগঞ্জবাসী।
ঘটনাসূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নং রেল গেইট থেকে বিবি রোড হয়ে চাষাঢ়া পর্যন্ত এবং ২ নং রেল গেইট থেকে সিরাজদৌলা রোড হয়ে চারারগোপ পর্যন্ত সড়কের ফুটপাত জুড়ে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন হকাররা। ফুটপাত পথচারীদের পায়ে হেটে চলাচলের জন্য নির্মিত হলেও সেখানে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছে হকাররা। আর তাদের পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়ছে একটি প্রভাবশালী মহল। শহরের ফুটপাত হকারমুক্ত করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন প্রচুর চেষ্টা করলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ঘটে গেছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ কিন্তু তাতেও সমাধান মিলেনি হকার সমস্যার।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। অভিযানের কয়েক ঘন্টা পর আবারো হকারদের দখলে চলে যায় শহরের ফুটপাতগুলো। এখনতো অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে যে, ফুটপাত দখলের পর হকাররা শহরের রাস্তা দখল করে তাদের ব্যবসা বিস্তার করছে। ফলে শহরের রাস্তাগুলোতে নিয়মিতভাবে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।
এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে বিবি রোড ধরে ২নং রেল গেইট পর্যন্ত ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জায়েদ পারভেজ চৌধুরূর নেতৃত্বে ঐদিন বিবি রোডের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। বিকেলে অভিযানের কয়েক ঘন্টা পরেই আবারো হকারদের দখলে চলে যায় ফুটপাত। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে পালিয়ে যাচ্ছে তারা। যেনো পলিশের সাথে ইদুর বিড়াল খেলা চলছে হকারদের।
শহরের উকিলপাড়ার জনৈক অধিবাসী ক্ষোভের সঙ্গে জানান, পুলিশের লোক দেখানো উচ্ছেদ আমরা বুঝে গেছি। কারন পুলিশ নিজেরাই ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলে। তাই তারা কোনদিনও স্থায়ীভাবে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করবে না। আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী এবং নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের কাছে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান আশা করছি।
কালীরবাজারের জনৈক অধিবাসী জানান, সবাই হকারদের উচ্ছেদের কথা বলে কিন্তু কেউ তাদের পুনর্বাসনের কথা বলে না। হকাররা কেউতো অবৈধ কোন ব্যবসা করছে না। পেটের দায়ে এসব অভাবী লোকগুলো ফুটপাতে বসে রুটি রুজির ব্যবস্থা করছে। আর ফুটপাতের হকাররা আছে বলেই আমাদের মতো নিম্ন আয়ের লোকেরা সামর্থ অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারছি। নাহলে উচ্চ মূল্যের বিপণী বিতানগুলোতে গিয়ে কেনাকাটা করা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব হয়ে পরবে। তাই ফুটপাত থেকে হকারদের তুলে দিয়ে অন্যত্র বসার ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু পুলিশ কোনদিনই তা করবে না। কারন ফুটপাত থেকে তাদের বিশাল অংকের মাসোহারা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ফুটপাত যেমন পথচারীদের চলাচলের উপযোগী করতে হবে, তেমনি হকারদেরও সঠিকভাবে পুনর্বাসন করতে হবে।