দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ পলাশের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক

নারায়ণগঞ্জ মেইল: স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে আলোচিত ডিবি হারুন যখন নারায়ণগঞ্জের এসপি হয়ে এলেন তখন একজনকে ‘দাড়ি টুপিওয়ালা চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে বেশ কিছুদিন জ¦ালাময়ী বক্তব্য দিয়েছেন। এসপি হারুনের তখনকার সেই ‘দাড়ি টুপিওয়ালা চাঁদাবাজ’ ছিলেন শ্রমিক নেতা কাউসার আহমেদ পলাশ। শুরুতেই পলাশের বিরুদ্ধে হুঙ্কারের মধ্য দিয়ে পলাশের চাঁদাবাজির সাম্রাজ্রে হানা দেন ধুরন্ধর হারুন এবং দুইজনে মিলে পুরো পাগলা-আলীগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে গড়ে তোলেন চাঁদাবাজির বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক সেক্টরের মূর্তিমান আতঙ্ক চাঁদাবাজ কাউসার আহমেদ পলাশ এসপি হারুনের শক্তি পেয়ে হয়ে উঠেন অপ্রতিরোধ্য। শ্রমিকের অধিকার আদায়ের নামে শিল্প মালিক-শ্রমিক সকলকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর পালাশসহ তার সেনাপতিরা সাময়িক গা ঢাকা দিলেও আড়ালে থেকে এখনও চাঁদবাজির পুরনো নেটওয়ার্ক চালানোর চেষ্টা করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাই অবিলম্বে এই চাঁদাবাজ বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ভুক্তভোগী মালিকর-শ্রমিকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের পক্ষে পলাশের সাথে শ্রমিক সেক্টরে চাঁদাবাজির পুরো নেটওয়ার্ক চালাতেন মোকাররম সর্দার। কিশোরগঞ্জের মোকারম সর্দার ছিলেন আলীগঞ্জের লোড আনলোড শ্রমিক। হারুনের আশির্বাদে তার অবৈধ আয়ের পাহারাদার নিযুক্ত হবার পর থেকে ভাগ্য খুলে যায় মোকারম সর্দারের। পলাশ আর মোকারম সর্দার মিলে পাগলা-আলীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীরে গড়ে তোলেন চাঁদাবাজির বিশাল সাম্রাজ্য।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানী খাত নিটওয়ার শিল্পেও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন কাউসার আহমেদ পলাশ। শ্রমিক অসন্তোষের ভয় দেখিয়ে শিল্প মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করতেন পলাশ। পলাশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কত গার্মেন্টস মালিক যে ব্যবসা গুটিয়ে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে ঢাকা কিংবা গাজীপুরে চলে গেছেন তার কোনো হিসেব নেই। পলাশের গার্মেন্টস সেক্টরের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্র করতো কথিত শ্রমিক নেতা শাহাত হোসেন সেন্টু। কথিত আছে প্রতিটি গার্মেন্টসেই এই সেন্টুর লোক নিয়োজিত থাকতো। তারা বিভিন্নভাবে শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতো আর সমাধানের নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতো। তাছাড়া কোনো ফ্যাক্টরীতে বেতন বোনাস নিয়ে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ হলে পলাশের গার্মেন্টস সেনাপতি সেন্টু লোকজন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরতো এবং শ্রমিকদের টাকা তুলে দেওয়ার কথা বলে মালিক শ্রমিক উভয়ের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো।

দেশে ট্রাক পরিবহন সেক্টরেও দীর্ঘদিন যাবত চাঁদাবাজি করে আসছেন কাউসার আহমেদ পলাশ। নিজে কখনো ট্রাক ড্রাইভার না হয়েও বাংলাদেশ আন্ত:জেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হয়েছিলেন পলাশ। এই সেক্টর থেকেও কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন তিনি, ছিলো তার বিশাল নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের দায়িত্বে ছিলেন আন্ত:জেলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন পাগলা আঞ্চলিক শাখার সভাপতি আবুল হোসেন। সামান্য একজন ট্রাক ড্রাইভার থেকে আবুল হোসেন পলাশের প্রশ্রয়ে হয়ে উঠেন কোটিপতি, দামি গাড়ি হাঁকিয়ে চলাচফেরা করতেন।

পাগলা-ফতুল্লা এলাকায় চলাচলরত ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক থেকেও চাঁদা তুলতেন পলাশ। পলাশের নিয়োগকৃত চাঁদাবাজ আজিজুল এই সেক্টরে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন। সামান্য গার্মেন্টস হেলপার থেকে আজিজুল অটো রিক্সায় চাঁদাবাজি করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

বৃহত্তর পাগলা-ফতুল্লা এলাকায় সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন জায়গা দখল করেছেন পলাশ। পলাশের এই ভূমিদস্যুতার কাজগুলো দেখাশোনা করতো কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার ইমান আলী ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা রিমন সিকদার। তারা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে জোর করে অল্প দামে জমি কিনে অনেক দামে বিক্রি করতেন। তাছাড়া স্থানীয় লোকজনের মাঝে জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ লাগিয়ে রাখতেন আর সালিশের নামে মোটা টাকা হাতিয়ে নিতেন।

দীর্ঘদিন যাবত নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক সেক্টরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা কাউসার আহমেদ পলাশ বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মালিক-শ্রমিকরা।

এসব বিষয়ে বক্তব্য নিতে পলাশসহ তার বাহিনীর লোকজনের মুঠোফোনে কল করা হলে সকল নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ