না:গঞ্জে নিয়ন্ত্রণহীন কিশোর গ্যাং, নেপথ্যে কারা!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জে বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌড়াত্ম। প্রশাসনের কঠোরতায়ও নারায়ণগঞ্জে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিনই শহর ও শহরতলী এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদেও একের পর এক হামলায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডবে একাধিক হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় জেলায় একাধিক সংবাদ কর্মী হামলার শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ১৭ মে রাতে ফতুল্লার ইসদাইরে রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সহপাঠীর ছুরিকাঘাতে ধ্রুব নামে এক স্কুলছাত্র খুন হয়েছে। এরআগে গত ১৩ মে রাতে নগরের গলাচিপা বোয়ালিয়া খাল এলাকায় কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক অগ্রবাণী পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক রশিদ চৌধুরী ও পথচারী জসিম।

কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা ও ফতুল্লা মডেল থানা এলাকায় রোবাস্ট পেট্টোলিং করেছে পুলিশ। একদিনের রোবাস্ট পেট্টোলিংয়ের পর নারায়ণগঞ্জ সদর এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তেমন কোন তৎপরতা দেখা না গেলেও ফতুল্লা মডেল থানায় কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযোন চালিয়ে বেশ কয়েকজন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা। ধারালো অস্ত্র হাতে দল বেঁধে চলা, পথিমধ্যে প্রকাশ্যে কাউকে কুপিয়ে জখম করা তাদের কাছে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

অভিযোগ রয়েছে, কিশোর গ্যাংয়ের শেল্টার দিচ্ছেন স্থানীয় কতিপয় রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিরা। যারা বিভিন্ন সময়ে নিজেদেও স্বার্থ হাসিল করতে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ব্যবহার করে থাকেন। আর সেই সকল রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিরা বড় ভাই হিসেবে পরিচিত। বড় ভাইয়ের আশ্রয় প্রশ্রয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, কিশোর অপরাধ বর্তমানে ভয়ঙ্কর আকারে রূপ নিয়েছে। এখনই কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে আগামীতে নারায়ণগঞ্জ শহরে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়ে যাবে। তাই কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আগে তাদের শেল্টারদাতাদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।

এব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, মাদকের মত কিশোর অপরাধও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তাই কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, অভিভাবকগণ, স্কুলের শিক্ষক, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

পুলিশ সুপার বলেন, কিশোর অপরাধীরা জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা পিছনে থেকে নিজেদের আরো শক্তিশালী মনে করে। তাই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আশ্রয় প্রশ্রয় না দিতে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের আহবান জানাচ্ছি।

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার বলেন, আপনার স্কুল পড়ুয়া সন্তানের হাতে অতি জরুরী ছাড়া স্মার্ট ফোন তুলে দিবেন না। শিক্ষার্থীরা স্মার্ট ফোনে বিভিন্ন ফাইটিং গেমস্ েআসক্ত হয়ে ধীরে ধীরে অপরাধ করার সাহস পেয়ে যায়। এছাড়াও আপনার সন্তার কার সাথে চলাফেরা করছে তা নিয়মিত খোঁজ খবর রাখতে হবে যাতে কোন অপরাধের সাথে যেন না জড়িয়ে পড়ে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বখাটেরা যেন আড্ডা না দেয় সেজন্য স্কুলের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সতর্ক থাকতে আহবান জানান পুলিশ সুপার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ