নারায়ণগঞ্জেও মামলাবাজ সিন্ডিকেট তৎপর

বিশেষ প্রতিনিধি: দেশের বিভিন্ন আলোচিত বিষয়গুলোর অনেক ঘটনার সাথেই কোন না কোন ভাবে সম্পৃক্ততা চলে আসে নারায়ণগঞ্জের। সম্প্রতি কালে মামলাবাজদের সিন্ডিকেটের তৎপরতা দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছিল। সেই আলোচিত মামলাবাজদের সিন্ডিকেটের তথ্য পাওয়ায় গেলে নারায়ণগঞ্জেও। মামলা দিয়ে শুধু হয়রানি নয়, জমিজমা ও বাড়ি দখল, অর্থ আদায়সহ নানা উদ্দেশ্য থাকে এসব মামলাবাজদের। কিছু দুষ্টলোকের পাশাপাশি ও দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তারা জড়িত এই সিন্ডিকেটে। এছাড়াও ভূয়া চিকিৎসার কাগজ যোগার করে দিতে পৃথক আরো একটি গ্রুপ রয়েছে।

গত রবিবার রাতে বন্দর থানায় একটি মামলার আসামী ফতুল্লা থেকে গ্রেফতারের পর অনুসন্ধান চালিয়ে মামলাবাজদের সিন্ডিকেটের তথ্য পাওয়া গেছে। এরা হলেন, ফতুল্লার বক্তবলী ইউনিয়নের উত্তর পোগালনগর এলাকার নুরুল ইসলামের পুত্র জাকির হোসেন, জাকির হোসেনের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা, বক্তববলীর মধ্যনগরের মৃত সাইজ উদ্দিন মাতবরের পুত্র আমান উল্লাহ ও আমান উল্লাহ’র স্ত্রী সালমা জাহান রোজী। আমান উল্লাহ’র ভাগ্নে জাকির হোসেনের নেতৃত্বে মামলাবাজ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই নিরহ মানুষদের ভূয়া মামলা করে হয়রানী করে আসছে এই মামলাবাজ সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সম্প্রতি ফতুল্লা থানাধীন উত্তর নরসিংপুর এলাকার আব্দুল রহমানের পুত্র মাসুদ রানার জমি সংক্রান্ত বিরোধ হয় মামলাবাজ সিন্ডিকেটের সদস্য জাকির হোসেনের সাথে। এনিয়ে বিরোধের পর ভোক্তভোগী মাসুদ রানাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দেয় জাকির হোসেন। এঘটনায় জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে রেখেছিল মাসুদ রানা।। কিন্তু তখনও মাসুদ রানা জানতেন না যে জাকির হোসেন মামলাবাজ সিন্ডিকেটের সদস্য। মাসুদ পেশায় ঔষধ ফার্মেসি ব্যবসা করেন। গত আগস্ট মাসের ১৭ তারিখ মাসুদ রানা জানতে পারেন জাকির হোসেন ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করেছে। মামলা নং-৪৩ তারিখ-১৭/০৮/২০১২১ ধারা- ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৪/৩২৬/ ৩৭৯/ ৪২৭/৫০৬।

মূলত স্বরাষ্ট্র মান্ত্রনালয়ের পরিচয় দিয়ে তদবির করিয়ে মামলাটি করিয়েছিল জাকির। মামলা দায়েরের পর পুলিশও বুঝতে পারে মামলাটি ভূয়া। এদিকে দায়ের করা সেই মামলায় আদালত জামিন দেয়ার পর ফতুল্লা আরো একটি মামলা করতে চায় জাকির। কিন্তু ভূয়া মামলার বিষয়টি তথ্য পাওয়ায় ফতুল্লা পুলিশ নতুন করে মামলা না নেয়ায় গত ৯ সেপ্টম্বর বন্দর থানায় জাকিরের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা মাসুদ রানাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে। এখানে উল্লেখ্য যে, বন্দর থানার ইন্সেপক্টের মহসীন (তদন্ত) ফতুল্লা থানায় কর্মরত ছিলেন। মামলা নং ০৯ ধারা ১৪৩/৩২৩/৩৫৪/৪২৭/৩৭৯/৩৬৫/৫০৬। আর ভূয়া মামলাটি করতে সহযোগীতা করেছিলেন ইন্সেপক্টের মহসীন। সেই মামলায় গত রবিবার রাতে মাসুদকে নরসিংপুর থেকে গ্রেফতার করে বন্দর থানা পুলিশ।

মামলায় বলা হয়- আসামীরা বন্দরের সাবধী এলাকায় ফুচকা খাওয়ার সময় তার নানা মন্নাফ ও নানি নূরকে মিশুক গাড়িতে করে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে মারধর করে ফেলে যায়। মাসুদের পরিবার জানায়, একের পর এক মামলা করছে অথচ কোন ঘটনার কিছুই আমরা জানি না। আর পুলিশও কিভাবে তদন্ত ছাড়াই মামলা রুজু করছে। এঘটনায় অনুসন্ধান চালিয়ে জানাগেছে, বক্তবলীতে তাদের সবাই মামলাবাজ হিসেবেই চিনেন। মামলার ভয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানও ভয় পায়। জাকিরের বস আমান উল্লাহ ও তার স্ত্রী ফতুল্লা থানায় বাদী হয়ে অসংখ্য মামলা করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে। ইতিমধ্যে সাতটি মামলার কাগজ এসেছে এই প্রতিবেদকের কাছে। স্থানীয়রা জানায়, জাকির ও আমান উল্লাহ’র প্রধান পেশাই মামলা করে হয়রানি করা। তারপর টাকা আদায় করা। পাশাপাশি বিভিন্ন মানুষের সাথে টাকার চুক্তি করে মামলা করে নিরহ মানুষকে হয়রানি করে এই মামলাবাজ সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ