‘মজলুম’ নিয়ে প্রশ্ন তোলা ভাষানীকে ঘিরে তৈমূর বলয়ে চাপা অসন্তোষ

নারায়ণগঞ্জ মেইল: বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার কমিটি গঠন নিয়ে সরগরম আদালতপাড়া। আইন পেশার পাশাপাশি নিজেদের মাঝে আলাপ আলোচনা আর বিচার বিশ্লেষন করছেন বিএনপির আইনজীবীরা। ফোরামের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্পষ্টতই দুটি ভাগ পরিলিেক্ষত হচ্ছে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে। এর এক ভাগের নেতৃত্বে আছেন সিনিয়র আইনজীবী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এড. তৈমূর আলম খন্দকার। তৈমূরের পছন্দের সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুল হামিদ ভাষানী।
এদিকে তৈমূর বলয় থেকে ভাষানীকে সভাপতি প্রার্থী করার গুঞ্জণে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে আইনজীবীদের মাঝে। কারন এড. তৈমূর আলম খন্দকার নিজেকে মজলুম জননেতা দাবি করে নিজ বাস ভবনের নাম রেখেছেন মজলুম মিলনায়তন। অথচ তৈমূরের এই মজলুম উপাধী নিয়েই এক সময় প্রশ্ন তুলেছিলেন ভাষানী, কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন তৈমূরের। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের গণ মাধ্যমে নানা শিরোনামে সংবাদও ছাপা হয়েছিলো। বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিলো তৈমূরের মজলুম উপাধী নিয়ে। তৈমূরকে বিতর্কিত করা সেই ভাষানীকে ফোরামের সভাপতি প্রার্থী করায় এবং তৈমূরের তাতে সমর্থন থাকায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে তৈমূর অনুসারীদের মাঝে। তৈমূরের এই সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতি মনে করছেন তারা এবং ভাষানীর মতো সুবিধাবাদী নেতার হাতে ফোরামের দায়িত্ব তুলে দিলে তৈমূরকে আবারো পস্তাতে হবে বলেই মনে করেন তারা।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে বিএনপির আইনজীবীদের এক সময়ের অভিভাবক ছিলেন এড. তৈমূর। আইনজীবীদের মাঝে ছিলো ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা। ফোরাম কিংবা বার নির্বাচন, সর্বক্ষেত্রেই তৈমূরের সিদ্ধান্তই ছিলো চুড়ান্ত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সে সময় আজ অতীত। নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ায় তৈমূরের জনপ্রিয়তা কমতে কমতে শূণ্যের কোঠায় এসে ঠেকার উপক্রম হয়েছে। আর এ জন্যে তৈমূরের একের পর ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করছেন অনেকে। যে গুটিকয়েক আইনজীবী এখনো নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় তৈমূরের ঝান্ডা উচিয়ে রেখেছেন, তাদের মাঝেও রয়েছে দুটি ভাগ। যার একটি পক্ষ থেমূরকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করান। তেমনি একটি ভুল সিদ্ধান্ত হচ্ছে ভাষানীর মতো মুখোশধারীকে আইনজীবী ফোরামের সভাপতি পদে মনোনয়ন প্রদান করা। আর এসব ভুল সিদ্ধান্তের কারনেই তৈমূর এক সময় নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়া থেকে হারিয়ে যাবেন-এমনটাই আশংকা প্রকৃত তৈমূর অনুসারীদের।
“মজলুম বিকৃত করায় তৈমূরকে অভিশাপ” শিরোনামে ২০১৪ সালে অনলাইন পোর্টাল নিউজ নারায়ণগঞ্জে প্রকাশিত সংবাদটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:
“মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ‘মজলুম’ উপাধি নিজের নামের আগে ব্যবহার করছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের অনুগামীরা। তবে তিনি নিজেও এ নামের প্রতি যথেষ্ট দুর্বল। শহরের মাসদাইরে নিজ বাড়ির মিলনায়তনকে নামকরণ করা হয়েছে ‘মজলুম’ মিলনায়তন। এদিকে সম্প্রতি ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক সভা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে যেখানে বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতের ইসলামীর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ‘মজলুম’ নাম নিজেরম নামের আগে যুক্ত করায় জেলা ন্যাপের নেতারা বলেছেন, তৈমূর আলম খন্দকার ধ্বংস হয়ে যাবেন। অন্যরা বলেছেন, প্রকৃতভাবে শুধুমাত্র ভাসানীর নামের আগেই মজলুম ব্যবহার হয়, যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নামে বঙ্গবন্ধুই মানায়। অন্য কেউ ‘মজলুম’ কিংবা ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দ ব্যবহার করা শোভনীয় না।
২০ দলীয় ঐক্য জোটের নেতা নারায়ণগঞ্জ জেলা ন্যাপের (ভাসানী) আহ্বায়ক কামাল ভূইয়া নিউজ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, বাংলার মাটিতে মজলুম জননেতা একজনই তিনি হলেন মাওলানা ভাসানী। যদি কেউ এটা বিকৃতি করে তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি হুজুরের পানি পড়া পান করছি। জন্মদাতা একজন হয় কিন্তু দুজন নয়। বাংলার মাটিতে আর কোন মজলুম জননেতার জন্ম হবে না। নিজে নিজে মজলুম সেজে গেলে তো হবে না। তিনি বলেন, আমি তৈমূর আলম খন্দকারকে বলেছি আপনি মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর ধারে কাছেও নাই। দয়া করে আপনি মজলুম জননেতা শব্দটি লাগিয়েন না। তাহলে আপনি ধ্বংস হয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি এখণনো এ শব্দটি অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে যাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম নিউজ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমি রাজনীতির শুরু থেকে মজলুম জননেতা হিসেবে মাওলানা ভাসানীকেই শুনে আসছি এবং বলে আসছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাওলানা ভাসানীকেই মজলুম জননেতা হিসেবে বলে যাবো। এ ছাড়া অন্য কাউকে মজলুম জননেতা বলি না।
নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল নিউজ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী ছিলেন নির্যাতিত একজন নেতা। তৈমূর আলম খন্দকারও একজন নির্যাতিত নেতা। মূলত তৈমূর আলমকে ভালবেসে বিএনপির নেতাকর্মীরা মজলুম শব্দটির প্রচলন করেন।
নারায়ণগঞ্জ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও নগর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভূইয়া নিউজ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমি ওই মজলুম আর এ মজলুম নিয়ে কিছু বলতে চাইনা। তবে আমি শুধু মজলুম শব্দের অর্থ কিছু বলব। সেটা হলো যার ভিতরে স্বার্থের কোন ছাপ থাকবে না। যেখানে স্বার্থ থাকবে সেখানে মজলুম জননেতা যাবেন এবং থাকবেন না। আর যেখানে যার বাড়িতে খাবেন সে খাবারটা কি উপার্জনে খাওয়ানো হচ্ছে সেটাও জেনে খেতে হবে। যেখানে যা পেলাম তাই খেলাম তা নয়। মজলুম শব্দের অর্থ হলো দুটি জামা থাকবে একই রকম। তার ভিতরে আরাম আয়েশ থাকবে না। সব সময় তিনি দেশের জন্য কাজ করবেন। দেশের স্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকবেন। এছাড়াও মজলুম শব্দের অনেক অর্থ রয়েছে। বিষয়টি ব্যাপক। যার ভিতরে এসব গুণাবলী থাকবে তিনিই মজলুম জননেতা।
তৈমুর আলম খন্দকারের ভাগিনা নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রশিদুর রহমান রশুকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা কি জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।”

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ