নারায়ণগঞ্জ মেইল: দীর্ঘ সাত বছর পর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের পরে সরকারি দলের সীমাহীন ভোট চুরি আর দখলবাজির কারণে সাধারণ আইনজীবীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি। সরকার পতনের পর এই প্রথম নারায়ণগঞ্জ বারে আগের মত উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই এই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে। অনেকে এই নির্বাচনকে নারায়ণগঞ্জ বারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া বলেন নির্বাচন আয়োজনের সকল প্রস্তুতি সফলভাবে শেষ হয়েছে জানিয়ে বলেন, সকল প্রস্তুতি সফলভাবে শেষ করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। বৃহস্পতিবার একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে ভোটকন্দ্র। কাউকে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ দেয়া হবে না। নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে যে গণতন্ত্র সন্ত্রাসীদের কারণে হারিয়ে গিয়েছিলো, সেই গণতন্ত্র আবার ফিরে আসবে ইনশাআল্লাহ। আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাড়তি ব্যালট ছাপানোর কোনো সুযোগ নাই কারণ প্রতিটা ব্যালটে আমাদের নির্বাচন কমিশনের ছয় জনের স্বাক্ষর করা আছে। 6 জনের স্বাক্ষর ছাড়া কোন ব্যালট গ্রহণযোগ্য হবে না। একসাথে ছয় জনের স্বাক্ষর কেউ জাল করতে পারবে না। আমি সকল ব্যালট পেপার লকারে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে এসেছি। কাল সকালে একটি সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবো বলে আশা রাখি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিও দখল করে নিয়েছিলো আওয়ামঅলীগের সন্ত্রাসীরা। স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনী সাধারণ আইনজীবীদের সকল অধিকার হরণ করে আইনজীবী সমিতিতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বহিরাগত সন্ত্রাসী আর পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে সকল বিরোধী মত দমন করে ফিল্মি ষ্টাইলে ভোট কেন্দ্র দখল করতেন এবং ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আওয়ামীলীগের প্যানেলকে বিজয়ী করেছেন। ভোট দিতে গিয়ে সাধারণ আইনজীবীরা লাঞ্ছিত হয়েছেন, সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন, একজন আইনজীবী হিসেবে তাদের অধিকার ভুলন্ঠিত হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কোর্ট ছেড়ে পালিয়ে যায় আওয়ামী লীগের সেসব সন্ত্রাসী আইনজীবীরা। জরুরী সাধারণ সভা ডেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম মনোনীত এডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির এবং অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধানের পূর্ণ প্যানেল।
এই প্যানেল একবছর সফলভাবে দায়িত্ব পালন করার পরে চলতি বছর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। এবারের জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে তিনটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বিএনপি সমর্থিত এডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির এবং এডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি প্যানেল, বিএনপির বিদ্রোহী রেজাউল করিম রেজা ও গালিবের নেতৃত্বে একটি প্যানেল এবং জামায়াত সমর্থিত এডভোকেট হাফিজ মোল্লা ও অ্যাডভোকেট মাইনুদ্দিন মিয়ার নেতৃত্বে একটি প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণার শেষ করেছেন। ২৮আগস্ট সকাল ৯ টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনে মোট ভোটার ১১৭২ জন।