এক বছর কোর্টে ফিরেননি তারা, বিএনপির জন্য সতর্কবার্তা

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি সকল পেশাজীবী সংগঠনের আওয়ামী পন্থি নেতারাও পালিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে দুর্দান্ত দাপট দেখানো আওয়ামী লীগ পন্থী আইনজীবীরাও ৫ আগষ্টের পর কোর্ট প্রাঙ্গণ ছেড়েছেন। এক বছর হয়ে গেলো তাদের কেউ এখনো কোর্টে ফেরেননি।


ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল, অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল আমিন রনি ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী এডভোকেট সুইটি ইসলাম ৫ আগস্টের পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন। তারা আর আদালতমুখী হননি। নারায়ণগঞ্জের আদালতে তাদের আর দেখা মিলেনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার উপর গুলি চালিয়ে গণহত্যার মামলায় আসামীও হয়েছেন তারা।


জানা যায়, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকে ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় থাকে দলটি। দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, ভোট কেন্দ্র দখল করে বারবার ক্ষমতার চেয়ারে বসেছে খুনি হাসিনা ও তার দল। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের সকল পেশাজীবী সংগঠনের নির্বাচনী সিস্টেমটাকেও ধ্বংস করে দিয়েছে সেই আওয়ামী লীগ সরকার।


সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ব্যবস্থা একটা সময় পর্যন্ত নিরপেক্ষ ছিলো। ২০১৮ সালের পর থেকে সেখানেও গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের পূর্ণ প্যানেলকে বিজয়ী করতে বিএনপির প্রার্থীদেরকে মারধর, হুমকিসহ নানা নির্যাতন করা হয় এবং নিজেদের মন মতো নির্বাচন কমিশন গঠন করে, আলাদা ব্যালট পেপার ছাপিয়ে, ভোট কারচুপি করে আইনজীবী সমিতিতে একক আধিপত্য বিস্তার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা। সেসময় নির্বাচনের দিন বহিরাগত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের এনে বিএনপির প্রার্থী এবং সমর্থক আইনজীবীদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করা হতো। এমনকি আদালত প্রাঙ্গন থেকে প্রার্থীদেরকে অস্ত্র ঠেকিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছিলো।


সে সময়ের নারায়ণগঞ্জ বার নির্বাচন গুলোতে গডফাদার শামীম ওসমানের পালিত সন্ত্রাসী তৎকালীন চেম্বার সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল এবং তৎকালীন পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের উপর চরমভাবে নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছেন। তাদের নির্যাতনের হাত থেকে সংবাদকর্মীরাও রেহাই পায়নি। অনেক সাংবাদিককে তারা লাঞ্ছিত করেছেন, মোবাইল ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়েছেন।


আওয়ামী লীগের যেসব আইনজীবীরা এই সন্ত্রাস আর মারামারিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৫ আগস্টের পর তারা কেউ আর কোর্টে ফিরতে পারেননি। আইনজীবী সমিতিকে একদলীয়করণের খেসারত দিতে গিয়ে তাদেরকে তাদের কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এটা থেকে ভবিষ্যতে আইনজীবীদের শিক্ষা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের প্রতি এটা একটা সতর্কবার্তা। ভবিষ্যতে কেউ যদি আইনজীবী সমিতির গণতন্ত্রকে হরণ করতে চায় তাদের পরিণতিও আওয়ামী লীগ পন্থী আইনজীবীদের মতো হবে বলে মনে করেন সকলে, তাদেরকেও যাতে কোটর্ ছেড়ে পালাতে না হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ