ওসি আসাদের খুঁটির জোর কোথায়?

নারায়ণগঞ্জ মেইল: বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সমালোচিত হয়েও নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বহাল থাকায় শহরময় চলছে আলোচনা সমালোচনা। ওসি আসাদুজ্জামানের খুঁটির জোর কোথায় এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ স্কুল ছাত্রী দিশামনি ফিরে আসার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছিল প্রশাসনে। কেননা ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে আসামীদের জবানবন্দি দেয়ার পরে সে নিহত কিশোরি ফিরে আসার ঘটনা শুধু নারায়ণগঞ্জেই নয়, সারা দেশেই হইচই ফেলে দিয়েছে। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ পুলিশের ভামূর্তিও প্রশ্নের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।

এরপর নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা থেকে বদলী হতে স্বেচ্ছায় ওসি আসাদুজ্জামান আবেদন করেছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে। কিন্তু আবেদনটি ছিল শুধুই আইওয়াস বলে মনে করছেন আইন বিশ্লেষকরা।

স্বেচ্ছায় আবেদনের বিষয়টি জানতে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কয়েকদিন আগে জানিয়েছিলেন, স্বেচ্ছায় যে কেউ আবেদন করতে পারেন। তবে এখনো বদলীর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।

এদিকে, দিশামনির ঘটনার পর বেশ কয়েকদিন ওসিকে নিশ্চুপ দেখা গেলেও ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ওসি আসাদ। কথিত আছে, ওসি আসাদুজ্জানের সাথে প্রভাবশালী হলের সাথে আতাঁত রয়েছে। যেকোন সমস্যায় প্রভাবশালীরা তাকে সহায়তা করেন। তাই দিশামনির ঘটনাও ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালীগের সহযোগীতা নিয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান ছিলেন বিতর্কিত এসপি হারুন অর রশিদের ঘনিষ্টজন।

গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ওসি হিসেবে কর্মরত থাকালীন সময়ে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছিল। হারুন অর রশিদ নারায়ণগঞ্জে আসার পর আসাদুজ্জামানকে ফতুল্লা মডেল থানায় আনতে তৎকালীন ওসি শাহ মঞ্জুর কাদিরকে বেকায়দায় ফেলে বদলী করার। কিন্তু শাহ মঞ্জুর কাদিরকে বদলী করলেও ফতুল্লা থানার ওসির দায়িত্ব দেয়া হয় আসলাম হোসেনকে। এরপর আসলাম হোসেনকে বেকায়দায় ফেলে বদলী করিয়ে আসাদুজ্জামানকে ফতুল্লায় আনার চেষ্টা চালান হারুন অর রশিদ। এতে ব্যর্থ হয়ে সদর ওসি কামরুল ইসলামকে ডিবিতে বদলী করে সদর থানায় আসাদুজ্জামানকে নিয়ে আসছেন। কথিত আছে কোটি টাকা খরচ করে নারায়ণগঞ্জে এসেছেন আসাদুজ্জামান। আসাদুজ্জামান সদর থানায় যোগদানের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতিসহ বেআইনী কাজ করার অভিযোগ রয়েছে আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ।

এছাড়াও সেবা নিতে আসা মানুষের সাথে খারাপ আচার করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সদর থানা আসাদুজ্জামান আসার পর থেকে অসংখ্য ভূয়া মামলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জমি সংক্রান্ত ঝামেলায় চাঁদাবাজী মামলা করে কোটি টাকার জমি দখল করিয়ে দেয়াসহ নানা বেআইনী কাজের অভিযোগ রয়েছে। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে থানার ভিতরে দেনদরবার চলে অসছিলো ওসি আসাদের নির্দেশে। তাছাড়া এসব কাজের জন্যে ওসি আসাদের ছিলো কিছু সোর্স ও দালাল বাহিনী। যারা বিভিন্ন জায়গা সম্পত্তির ভেজাল মিমাংসার কথা বলে ভুক্তভোগীদের থানায় নিয়ে আসতেন আর সমাধানের নামে মোটা অংক হাতিয়ে নিতেন সদর ওসি আসাদুজ্জামান। কথিত আছে সদ্য সমাপ্ত ঈদুল আযহার অস্থায়ী পশুর হাটগুলো থেকেও ওসি আসাদের নামে মোটা অংকের সম্মানী দেওয়া হয়েছিলো। এছাড়াও আসামীদের রিমান্ডে এনে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগও ছিলো তার বিরুদ্ধে।

এদিকে সদর ওসি বিতর্কিত কাজে ব্যস্ত থাকায় শহরে ছিনতাই, মাদক ব্যবসা বেড়ে যাওয়াসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে বলে দাবী সচেতন মহলের। ইজিবাইকে করে পুলিশের দুটি টিম কাজ করছে। যারা মাদক উদ্ধারের নামে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে মাসোয়ারা তুলে তার ভাগ দিচ্ছেন ওসি আসাদকে। কিছুদিন আগে আসাদের বিশেষ টিমের সদস্য এসআই ইলিয়াস হোসেন সৈয়দপুর থেকে ৩৭০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। বিপুল পরিমান ফেনসিডিল উদ্ধার হলেও কোন আসামী গ্রেতার করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আসামীদের ছেড়ে দিয়েছে এসআই ইলিয়াস হোসেন। কথিত আছে, ইলিয়াসসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য বেআইনীভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে তার ভাগ দেন ওসিকে। এদের মধ্যে বেশ কয়েক ইতিমধ্যে সদর থানা থেকে বদলী করা হয়েছে। কিন্তু এখনো বিতর্কিত ওসি আসাদুজ্জামান বহাল থাকায় চলছে নানা সমালোচনা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ