নারায়ণগঞ্জ মেইল: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শাস্তি পেয়েছেন র্যাবের সেই ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে তিরস্কারসূচক লঘুদণ্ড প্রদান করা হয়। সিনিয়র সহকারী পদমর্যাদার কর্মকর্তা সারওয়ার র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকার সময় ভেজাল, অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর তাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।
গত বছরের ৭ মার্চ প্রশাসনের ৩৩৭ জন সিনিয়র সহকারী সচিবকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। কিন্তু পদোন্নতি বঞ্চিত হন ২৭তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সারওয়ার আলম। এরপর তিনি ওই বছরের ৮ মার্চ ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেন, চাকুরী জীবনে যেসব কর্মকর্তা কর্মচারী অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের বেশিরভাগই চাকুরী জীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন এবং এদেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়।
তাকে শাস্তি দেওয়ার প্রজ্ঞাপনে ওই স্ট্যাটাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সারওয়ার আলম একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করার মাধ্যমে অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ করেছেন এবং এতে জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ায় ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে গত বছরের ৩০ জুন অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী পাঠিয়ে কৈফিয়ত তলব করা হয়। সারওয়ার আলম আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো লিখিত বক্তব্য দাখিল করেননি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে, তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় সারওয়ার আলম ফেসবুকে মন্তব্য করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাই ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৩(খ) বিধিতে বর্ণিত ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমালার ৪(২)(ক) বিধি অনুযায়ী তাকে ‘তিরস্কার’ সূচক লঘুদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সারওয়ার আলমের আলোচিত অভিযানের মধ্যে ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে অভিযানও রয়েছে। এসব ঘটনায় ১৪২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। উদ্ধার করা হয় ক্যাসিনো থেকে অবৈধভাবে উপার্জিত ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা ২০১৫ সাল থেকে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন সারওয়ার আলম। তবে প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৪ সালে। ফার্মগেটের ওভারব্রিজ বাদ দিয়ে সরাসরি যারা রাস্তা পার হচ্ছিলেন, তাদের নামমাত্র জরিমানা করে সচেতন করেছিলেন তিনি। তার পরিচালিত আরও একটি অন্যতম অভিযানের হলো রিজেন্ট হাসপাতালের ভুয়া করোনা রিপোর্ট তৈরির বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান।
যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের অফিসে অভিযান চালিয়ে সারওয়ার আলম অবৈধভাবে উপার্জিত নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, বিদেশি ডলার, মদ ও অস্ত্র উদ্ধার করেন। ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার হাতিরপুলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য নকল করে বাংলাদেশে উৎপাদনের কারখানায় হানা দেন সারওয়ার আলম। হাতেনাতে ধরে জরিমানা এবং দুজনকে জেল দেন তিনি। মহামারীর শুরু থেকেই করোনা সুরক্ষাসামগ্রীর মান, সরবরাহ ও দাম মনিটরিংয়ে মাঠে একজন সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে তৎপর ছিলেন সারওয়ার আলম।