নারায়ণগঞ্জ মেইল: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে গত ৫ আগষ্ট ডেমরা এলাকায় গুলিতে প্রাণ হারান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ঝাল মুড়ি বিক্রেতা হযরত বিল্লাল। সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে নিহত বিল্লালের মা বাদী হয়ে গত ২৪ আগষ্ট ডেমরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়াসহ ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৩/৪ শত জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়।
এদিকে মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়ার লোকজন মামলা তুলে নিতে বাদীকে ভয় ভীতি দেখাতে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের ভয়ে বাদী ইতিমধ্যেই মামলা তুলে নিতে লিখিত আবেদন করেছেন। সেইসাথে মামলার আসামীদের কাছ থেকে ১ লাখ করে টাকা নিয়ে বাদীকে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মজিবর ও ইয়াসিন এবং কয়েক লাখ টাকা ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে নিহত বিল্লালের পিতা হোসেন মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলে হযরত বিল্লাল আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে নিহত হয়েছে। আমরা ডেমরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলাম কিন্তু সেই মামলা তুলে নিতে থানায় লিখিত আবেদন করেছি।
মামলা তুলে নিতে চাচ্ছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে প্রতিবেদককে তার বাড়িতে আসার জন্যে অনুরোধ করেন।
এদিকে মামলা তুলে নেওয়ার খবরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে পুরো সিদ্ধিরগঞ্জ জুড়ে। বিগত সরকারের আমলে যারা সিদ্ধিরগঞ্জে সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েম করেছিলো সেই মজিবর আর ইয়াসিনের দু:সাহসের উৎস কোথায় সেটাই এখন সকলের কাছে প্রশ্নের বিষয়। তাছাড়া সারা বাংলাদেশ জুড়েই হত্যা মামলা দায়ের হলেও কোথাও মামলা তুলে নেওয়ার নজির নেই, সেই ঘটনাই এখন ঘটতে যাচ্ছে ভেবে তারা ফুঁসে উঠছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, হত্যা মামলা কখনো আপোষ যোগ্য নয়। বাদী চাইলেই মামলা তুলে নিতে পারবে না কারন হত্যাকান্ডটি সংগঠিত হয়েছে এটা সত্যি। এখন প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে এর সাথে কারা জড়িত। তদন্ত করে তারা দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিবে।
আওয়ামীলীগ নেতাদের হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা অনুধাবন করছি। স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের নেতারা গত ১৫ বছরে লুটপাট করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। এখন সেই টাকা খরচ করে তারা তাদের গডফাদারদের রক্ষা করতে চাইছে। তাছাড়া বেশিরভাগ মামলার বাদী খুবই গরিব। তাদের এই দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে সেই অসাধু চক্র মামলায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। তবে এ ব্যাপারে আমরা খুবই সজাগ আছি, কঠোর হস্তে তাদের প্রতিহত করা হবে।