নারায়ণগঞ্জ মেইল: আওয়ামীলীগ সরকার পতনের ঠিক আগ মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল চরম অবনতিতে। তৎকালীন পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বারটি টিম গ্রেফতার বাণিজ্যে নগরবাসীর মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছিল। পাশাপাশি থানায় মিথ্যা মামলা অহরহ হতো সেই সময়। তবে ৫ আগস্ট আয়োমীলীগ সরকার পতনের কিছু দিনপর জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে প্রত্যুষ কুমার মজুমদার যোগ দিয়ে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কঠোর পরিশ্রম করলেও সম্প্রতি সদর ও ফতুল্লা মডেল থানায় পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলা দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হযেছে। এতে করে জেলা পুলিশ সুপারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেফতারে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা করে। মামলায় আলোচিত ফুড ব্লগার মিথুন ও স্থানীয় সাংবাদিক জিসান, অন্তঃস্বত্ত্বা নারীসহ ২৫২ জনকে আসামী করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত নয়, এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। জিসানের পক্ষে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। মানববন্ধানে পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবী করা হয়।
সদর মডেল থানার মামলার বিতর্ক শেষে ফতুল্লা মডেল থানায় পুলিশের আরেকটি মামলা দিয়ে বির্তক সৃষ্টি হয়েছে। কাশীপুরের ভোলাইলে আজমেরী ওসমানের অনুসারীদের মিছিল থেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে সড়ক ও নির্মাণাধীন ফ্ল্যাইওভারের কাজে বিঘ্ন ঘটনো এবং ক্ষতিগ্রস্থ করার চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। ফতুল্লা মডেল থানায় দায়ের করা এ মামলায় ৩২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলায় স্বেচ্ছাসেবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ রাজনীতির সাথে জড়িত নয়, এমন ব্যক্তিদের আসামী করা হয়েছে। মামলার ৩২ নং আমাসী করা হয় রাতুল শেখ নামে একজনকে। রাতুল শেখ কাশীপুরের আলোচিত একজন স্বেচ্ছাসেবী। করোনা পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করেছেন। সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠন ‘আলোকিত কাশীপুর’ সক্রিয় সদস্য রাতুল জুলাইয়ের আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন। আন্দোলনের ছবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
মামলার ১২ নং আসামি করায় স্থানীয় এক সাংবাদিককে। মামলার ১নং আসামী সাখাওয়াত হোসেন বাবুর সাথে অস্থায়ী পশুর হাট ইস্যুতে কাশীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মঈনুল হোসেন রতন ও সাধারণ সম্পাদ আরিফ মন্ডলের সাথে বিরোধ হয়। ইউনিয়ন বিএনপির নেতাদের সাথে ইচ্ছা প্রকাশ করলে মামলা দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন বাবু।
কাশীপুরে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের নাম না থাকলেও জমি নিয়ে বিরোধ এমন ব্যক্তিদের আসামী করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের দায়ের করা মামলায় রাজনীতির সাথে জড়িত না নিরীহ এমন ব্যক্তিদের নাম দিল কে?
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানান, মামলা হলেই তো সে অপরাধী না। যদি কেউ জড়িত না থাকে তাহলে তদন্ত শেষে তাদের নাম বাদ দিয়ে দেয়া হবে। মামলার আসামীদের বিষয় খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।