কায়েস হোসেন ‘শিকড় থেকে শিখরে’

নারায়ণগঞ্জ মেইল: কায়েস হোসেন। বর্তমানে বাংলাদেশের একটি প্রসিদ্ধ ব্যাংকের কল সেন্টার প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন, অথচ যিনি কিনা তার ক্যারিয়ার এর শুরুতেই কল সেন্টারের জব ইন্টারভিউতে বাদ পড়েছিলেন তার ইংরেজিতে কথা বলার অদক্ষতার কারনে। ১৪ বছরের সুদীর্ঘ এক ক্যারিয়ারে তিনি পুরোটা সময় কাটিয়েছেন গ্রাহক সেবার সাথে। প্রফেশনাল ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০৮ সালে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকে। সেখানে কাস্টমার কেয়ারে ২০১০ পর্যন্ত কাজ করে চাকুরী পরিবর্তন করে যোগ দেন আরেক মোবাইল অপারেটর ওয়ারিদ টেলিকমে যা পরবর্তীতে একীভূত হয়ে যায় এয়ারটেল বাংলাদেশের সাথে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর হিসেবে এয়ারটেল বাংলাদেশ তৃতীয় পক্ষ ডিজিকন টেকনোলোজিস এর কাছে তাদের গ্রাহক সেবার (কল সেন্টার) দায়িত্ব তুলে দেয় যেখানে কায়েস হোসেন প্রথম ট্রেইনার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে তার লিডারশিপ পর্যায়ে কর্ম জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন ধাপে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার এবং ট্রেনিং ম্যানেজার পদে পদোন্নতি পান। ২০১৭ সালে তিনি ডিজিকন টেকনোলোজিস থেকে দেশের সবচেয়ে বড় BPO (Business Process outsoursing) কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিসে ট্রেনিং এন্ড লার্নিং ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি এয়ারটেল, গ্রামীনফোন, টেলিটক, রবি, এবং বাংলালিংক এর ট্রেনিং ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স এর কল সেন্টার প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে তিনি বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য ব্যাংক সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের কল সেন্টার প্রধান হিসেবে যোগদান করেন এবং বর্তমানে সেখানেই কর্মরত আছেন। কিভাবে তিনি একজন কল সেন্টারের সাধারণ এক্সেকিউটিভ থেকে নিজেকে কল সেন্টারের প্রধান হিসেবে নিজেকে উন্নীত করলেন, এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, “ধৈর্য আর একাগ্রতা, কল সেন্টারে কাজটা খুব কঠিন। সারাদিন ধরে কাস্টমারের হাজারটা প্রশ্নের উত্তর হাসিমুখে দেয়াটা একটু কষ্টসাদ্ধ। বেশিরভাগই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন এবং অন্য চাকুরী খোঁজেন। কিন্তু কল সেন্টার বা কাস্টমার সার্ভিস একটা সম্ভাবনাময় খাত। দেশের প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানই এখন আফটার সেলস সার্ভিস নিয়ে সচেতন। আপনার কমিউনিকেশন স্কিল আর কনফিডেন্স যদি থাকে, কাস্টমার সার্ভিসে আপনার সফলতা সুনিশ্চিত”. একজন কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভের কি কি গুন থাকা উচিত? এর জবাবে তিনি বলেন “মনোযোগ দিয়ে গ্রাহকের কথা শোনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বেশিরভাগ সময় তাড়াহুড়া করে কলের সময় কমাতে গিয়ে গ্রাহকের কথা ঠিকমতন শুনি না যার কারণে গ্রাহক তার প্রয়োজনীয় সার্ভিস ঠিকমতন পান না এবং এতে গ্রাহক অসন্তুষ্টি বেড়ে যায়। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখা। সকল গ্রাহকের বোঝার ক্ষমতা কিংবা বোঝানোর ক্ষমতা এক নয়। সেই ক্ষেত্রে কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভের দায়িত্ব হচ্ছে তাকে তার মতন করে বোঝানো এবং সে যেন এটা অনুভব করে, আমি যার সাথে কথা বলছি তিনি মনোযোগ দিয়ে আমার প্রব্লেমটা শুনেছেন এবং তিনি অবশ্যই আমার সমস্যাটার একটা সমাধান করবেন। প্রতিটা কল এর সময়কাল খুবই কম থাকে কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই তাকে গ্রাহকের সাথে একটা পেশাদার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে”। একজন কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভের লিডারশিপ লেভেলে যেতে হলে কি কি গুন থাকা দরকার, তার উত্তরে তিনি বলেন, “জানার আগ্রহ। একজন লিডারকে মূলত ম্যান মানাজেমেন্ট আর পারফরমেন্স ম্যানেজমেন্ট করতে হয়। সেক্ষেত্রে কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট এর উপরে লেখাপড়া করাটা খুব দরকার আর সেই সাথে মাইক্রোসফট এক্সেল এর উপরে দক্ষতা থাকাটা খুব জরুরি যেটা পারফরমেন্স এনালাইসিস এর সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী টুলস”। কায়েস হোসেন একজন মাইক্রোসফট সার্টিফাইড প্রফেশনাল সেই সাথে একজন লিন সিক্স সিগমা ব্ল্যাক বেল্ট ধারী। তাছাড়া আছে তার বিসনেস কমিউনিকেশন, লিডার ৩৬০ ডিগ্রি এবং কাস্টমার সার্ভিস এক্সেলেন্সের মতন অসংখ্য ট্রেনিং এর অভিজ্ঞতা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ