মুকুলের নেতৃত্বে বিএনপি করা কতটা নিরাপদ!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম হচ্ছে আতাউর রহমান মুকুল। সরকার দলীয় স্থানীয় এমপির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দুদফায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দুই হাতে টাকা কামিয়েছেন আর বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়েছেন এই মুকুল। বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে কোনদিন দেখা মিলেনি অথচ সরকারি দলের নেতাদের সাথে হর হামেশাই সভা সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতিতে কোনদিন ফুল না দিলেও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি নিয়মিত শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আর তাই বিএনপির ভিতর ধাপটি মেরে থাকা সরকারি দলের দালাল হিসেবে পরিচিত আতাউর রহমান মুকুলের নেতৃত্বে বিএনপির রাজনীতি করা কোনভাবেই নিরাপদ নয় বলে মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা। সেইসাথে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে মুকুলকে বিএনপির সব ধরনের পথ পদবী থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

 

মুকুলের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ইতিমধ্যেই মুকুলের পাশ থেকে সরে গেছে সাবেক যুবদল সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও তার অনুসারীরা। সেইসাথে বিএনপি নেতা জাকির খানের অনুসারীদেরও আর মুকুলের সাথে দেখা যাচ্ছে না। সুস্থ রাজনীতির চর্চায় অভ্যস্ত সাধারণ নেতাকর্মীরাও মুকুলের কাছ থেকে সরে আসছেন। শুধুমাত্র লোভী কিছু কথিত বিএনপি নেতা সেলিম ওসমানের টাকার লোভে মুকুলের পিছু পিছু ঘুরছেন বলে অভিমত ত্যাগী নির্যাতিত বিএনপি নেতাকর্মীদের।

 

তৃণমূল মনে করে, এতদিন বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় মুকুল নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন এটাও সরকারি দলের প্রেসক্রিপশন। সরকারি দলের প্রার্থীর রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টি করছেন। বিএনপি নেতা কর্মীদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করে বিএনপিকে দুর্বল করার হীন চক্রান্ত বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে উঠেছেন মুকুল। বিএনপিকে দুর্বল করতে পারলে স্থানীয় সরকার দলীয় এমপির বিজয় সহজ হয়ে যাবে বলে দিনরাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন আতাউর রহমান মুকুল ।স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সে টাকা বিএনপি’র বিভক্তির পেছনে খরচ করছেন তিনি।

 

মুকুলের অতীত ইতিহাস স্মরণ করে আতঙ্কিত বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে মুকুল সরকারি দলের পক্ষে কাজ করেছেন এবং বিএনপির নেতা কর্মীদেরকে মামলা হামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছেন। তার নির্যাতনের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। সামনে আবার নির্বাচন আসায় সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে শুরু করে দিয়েছেন আতাউর রহমান মুকুল ওরফে দালাল মুকুল। যেকোনো মূল্যে এবার মুকুলকে প্রতিহত করতে হবে তা না হলে সদর বন্দরে বিএনপি’র অস্তিত্ব বিলীন করে দেবে এই দালাল।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করা আতাউর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের। বিএনপির গুরুত্বপূর্ন পদে থেকেও তিনি প্রায় এক যুগ যাবত সরকারী দলের নেতাদের তাবেদারি করেছেন, এমনকি তার থেকে নানাভাবে হয়রানি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচিগুলোতে অংশ না নিলেও সরকারী দলের অনুষ্ঠানে মিছিল নিয়ে শোডাউন করতেন। সেই ‘লাঙ্গল মার্কা’ মুকুল নিশ্চয়ই নতুন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপি সাজার চেষ্টা করছে বলে আশংকা তৃণমূলের। কয়েক বছর আগে একটি অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘কুকুর’ গালি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের একজন নেতা, যে অনুষ্ঠানে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয় সে গালি হজমের পাশাপাশি মুচকি হাসিও দিয়েছিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। ২০১৫ সালের ১৬ জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত জেলা পরিষদ মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘কুকুর’ বলে গালাগাল করেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার আওয়ামীলীগ নেতা গোপীনাথ দাস। সে অনুষ্ঠানের মঞ্চে অতিথি হিসেবে বসে ছিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তিনি হাসিমুখে সে গালি হজম করেন কোনো প্রতিবাদ করেননি।

 

এছাড়াও গত ১৫ বছর যাবত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। সরকারি দলের হামলা-মামলার শিকার হয়েছে জেল জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন আত্মগোপনে পালিয়ে থেকেছে কিন্তু এসব কিছুই পোহাতে হয়নি আতাউর রহমান মুকুলকে। তিনি দিব্যি শহরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন। তাকে দেখা গেছে সরকারি দলের বড় বড় নেতাদের সাথে সভা-সমাবেশে অথচ দেখা মিলেনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে।

 

এমনকি গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন মুকুল। বন্দরের কেন্দ্রগুলো থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের মেরে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে মুকুলের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকারি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সহায়তা করেছেন মুকুল- এমন অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের। এ ধরনের গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাকে সিটি নির্বাচনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, যা বিএনপি নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আর তৈমূরকে সহযোগিতা করায় এটিএম কামালকে দল থেকে বহিস্কার করা হয় অথচ এটিএম কামালের মতো মুকুলও সরাসরি তৈমূরকে নির্বাচনে সহযোগিতা করেছিলেন কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়। তৈমূরের নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে মুকুল বলেছিলেন ‘তৈমূূরের পক্ষে কাজ না করলে নারায়ণগঞ্জ থেকে বের করে দেয়া হবে’।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ