চতুর্থ প্রজন্মের হাল ধরবেন কে?

রাসেদুল ইসলাম: নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির ইতিহাসে ওসমান পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ওসমান পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম। খান সাহেব ওসমান আলী, একেএম সামসুজ্জোহা, নাসিম ওসমান ও পরবর্তিতে একেএম সেলিম ওসমান ও একেএম শামীম ওসমান রাজনীতির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনা এসেছে ওসমান পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম নিয়ে। প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের পুত্র আজমেরী ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান প্রত্যক্ষ ভাবে রাজনীতির মাঠে না নামলেও পরোক্ষ ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। আপাতত বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থেকে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চতুর্থ প্রজন্মের এই দুই উদীয়মান নেতা। যদিও আজমেরী ওসমানকে রাজনীতির মাঠে দূরে রাখতে একটি কুচক্রিমহল একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই দিক দিয়ে অনেকটা বিনা বাধায় নিজের অবস্থান শক্ত করছেন অয়ন ওসমান।

জানা গেছে, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গণভ্যূত্থান এবং ৭১’র মহান মুক্তিযোদ্ধেও এই পরিবারটির অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। ওসমান পরিবারের প্রাণপুরুষ খান সাহেব ওসমান আলী কর্মজীবনে ছিলেন ব্যবসায়ী। পরবর্তীতে ১৯৪৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে (নারায়ণগঞ্জ দক্ষিণ নির্বাচনী এলাকা) ঢাকার নবাব খাজা হাবিবুল্লাহকে পরাজিত করে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট এবং ঢাকা জেলা মুসলিম লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহর মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন এম ওসমান আলী। ১৯৪৬ সালে নারায়ণগঞ্জে ‘ঝুলন যাত্রা’ উপলক্ষে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হলে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সমঝোতা আনায়নে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ছিলেন এম ওসমান আলী।

খান সাহেব ওসমান আলীর ছেলে একেএম শামসুজ্জোহা ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিক। ১৯৫২ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হিসেবে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। সেই সময় একটি মিথ্যা মামলায় তাঁকে ১৮ মাস কারাবন্দী রাখা হয়। তিনি ১৯৭০-এর নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের সময় মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমণ করে জনমত গঠন ও তহবিল সংগ্রহে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম বেতার ভাষণ প্রদান করেন এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন একেএম শামসুজ্জোহা। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর মন্ত্রিত্ব গ্রহণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তাঁকে ১৮ মাস কারাবন্দী রাখা হয়। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ২০১২ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক ২০১১ দেয়া হয়। একেএম শামসুজ্জোহার সহধর্মীনি নাগিনা জোহাও ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অগ্রনী সৈনিক।

এই পরিবারেরই বড় সন্তান একেএম নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টির হয়ে ৪ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তারই ছোট ভাই সেলিম ওসমান। তবে নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর কোনঠাসা করে রাখা হয় তার পরিবারের সদস্যদের। বর্তমানে তার সহধর্মিনী পারভান ওসমান ও পুত্রকে কোনঠাসা করে রাখতে একটি মহল নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য পদে জোড়ালো প্রার্থী ছিলেন নাসিম ওসমান পত্নী পারভীন ওসমান। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কারণে তাও সম্ভব হয়নি। মূলত নাসিম ওসমান নেই বলেই তার পরিবারের সদস্য ও অনুসারিরা নানামুখী চাপে রয়েছেন-এমন মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে নাসিম ওসমানের মতই জন সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন আজমেরী ওসমান। পরোক্ষ ভাবে রাজনীতিতেও সরব রয়েছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির একাংশ ও জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন ছাত্র সমাজ তার নিয়ন্ত্রনেই রয়েছে। এছাড়াও নাসিম ওসমানের কর্মী বাহিনীর সকলেই আজমেরী ওসমানের দিকে তাকিয়ে আছেন। এছাড়াও শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকার শতাধিক অসহায় পরিবারের সংসর চালান আজমেরী ওসমান। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে সেই অসহায় পরিবারগুলোর কাছে সংসার খরচ পৌঁছে দেন আজমেরী ওসমানের লোকজন। এছাড়াও অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খরচ বহন, মসিজদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। অনেক অসুস্থ্য মানুষকে আর্থিক অনুদান দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আজমেরী ওসমান।

আজমেরী ওসমানের পাশাপাশি ওসমান পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের অয়ন ওসমানও পরোক্ষ ভাবে রাজনীতির মাঠ শক্ত করছেন। নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগ পুরোপুরি ভাবে অয়ন ওসমানের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এছাড়াও সমাজ সেবায় রয়েছে তার ব্যাপক অবদান। অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খচর বহন করতে বেশ কয়েকজনকে দিয়েছেন আর্থিক অবদান। মসিজদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। অনেক অসুস্থ্য মানুষকে আর্থিক অনুদান দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি। ব্যবসায়ী হিসেবেও নিজের তার পরিচিতি রয়েছে। জেড এন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন অয়ন ওসমান। সেই সাথে দায়িত্ব পালন করছেন চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক পদে। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের শ্রেষ্ঠ তরুন করদাতা হিসেবে সম্মানিত হয়েছে অয়ন ওসমান। তাই আগামীতে ওসমান পরিবারের হাল ধরবে কে-তা নিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর মধ্যে চলছে কৌতুহল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ